সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। সোমবার ভারচুয়ালি আলোচনা করেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।সেখানে উঠে আসে বুচা গণহত্যার প্রসঙ্গ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মোদি-বাইডেন বৈঠকের পরই ওয়াশিংটনে শুরু হবে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা।
এদিনের বৈঠকে মূলত দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে তোলা নিয়ে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে। এছাড়া, করোনা মহামারী, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি-সহ গোটা বিশ্বের নানাবিধ বিষয় নিয়েও নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন তাঁরা। এই সংক্রান্ত আলোচনায় দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ নিয়েও কথা হয় বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, ইতিমধ্যে ওয়াশিংটন পৌঁছে গিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তাঁরা।
I have spoken with Presidents of both Ukraine and Russia over telephone, several times. I not only appealed to them for peace but also suggested President Putin to hold direct talks with the Ukrainian President. Detailed discussions were held over Ukraine, in our Parliament: PM pic.twitter.com/LEJjz01A7p
— ANI (@ANI) April 11, 2022
বলে রাখা ভাল, রাষ্ট্রসংঘে বুচা গণহত্যার তীব্র নিন্দা করে ‘স্বাধীন’ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ভারত। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা রুশ হামলার মুখে এই প্রথম কিয়েভের আশপাশের ৩০টি শহর ও গ্রামের দখল নিতে পেরেছে ইউক্রেনের ফৌজ। তারপরই হানাদার বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার হওয়া এলাকাগুলির ভয়াবহ ছবি জনসমক্ষে উঠে আসছে। ইউক্রেনের বুচা শহরে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে কেঁপে ওঠে বিশ্ব। শহরটিতে পাওয়া গিয়েছে একের পর এক গণকবর, ৩০০-রও বেশি নাগরিকের মৃত্যু, মৃত মহিলাদের শরীরে পোড়া স্বস্তিক চিহ্নের দাগ এমনকি ১০ বছরের বালিকার গোপনাঙ্গে আঘাত এবং অত্যাচারের চিহ্ণও স্পষ্ট। যা দেখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলে তোপ দেগেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুধু তাই নয়, অনেকটা নুরেমবার্গের কায়দায় পুতিনের বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। যদিও, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
এদিন বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আজ আমরা এমন সময় আলোচনায় বসেছি যখন ইউক্রেনের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কয়েক সপ্তাহ আগেও ইউক্রেনে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় আটকে ছিলেন। তাঁদের অনেকেই পড়ুয়া।” মোদি আরও বলেন, “আমরা বুচা গণহত্যার খবর প্রকাশ্যে আসতে নিন্দায় সরব হয়েছি। এই বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছি আমরা। যুদ্ধ থামাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছি। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের পার্লামেন্টেও ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
আলোচনায় আমেরিকার কাছে ভারতের গুরুত্ব স্পষ্ট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের মজবুত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের মিল ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। মানবিকতার খাতিরে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর ভারতের পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।”
We share a strong & growing major defence partnership. The majority of our partnership is a deep connection between our people and our shared values. Our friendship and our shared values. I want to welcome India’s humanitarian support for the people of Ukraine: US Pres Joe Biden pic.twitter.com/XOGsPUTlpg
— ANI (@ANI) April 11, 2022
বলে রাখা ভাল, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া (Russia)। সীমান্ত পেরিয়ে কিয়েভের উদ্দেশে রওনা দেয় পুতিনের বাহিনী। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তৈরি হয়েছে অত্যন্ত জটিল সমীকরণ। গোড়া থেকেই আমেরিকা চাইছে রুশ-সঙ্গ ছাড়ুক ভারত। মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে অতীত থেকে চলে আসা ঐতিহাসিক সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জানে বাইডেন প্রশাসন। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরশীলতার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত। তবুও মোদি সরকারের কাছে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য চাপ তৈরি করছে ওয়াশিংটন। মস্কো-কিয়েভ সংঘাতে নয়াদিল্লির অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশ্ন তুলেছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অপরিশোধিত তেল নিয়ে চুক্তিতেও অসন্তুষ্ট হয়েছে হোয়াইট হাউস ও পশ্চিমের দেশগুলি।
উল্লেখ্য, মনমোহন সিংয়ের জমানা থেকে আমেরিকার সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক তৈরি করেছে ভারত। ইউপিএ আমলে অসামরিক পরমাণু চুক্তি থেকে মোদি জমানার অ্যাপাচে হেলিকপ্টার কেনার পর আরও কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু এরপরও ভারতের বিদেশনীতি যে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই তৈরি তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রসংঘে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি ভারত। একইসঙ্গে আমেরিকার আপত্তি উড়িয়ে রুশ তেল আমদানি করে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.