সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাজেট পেশের পর অবশেষে লোকসভায় মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লোকসভায় জবাবি ভাষণে ফের একবার রাহুল গান্ধী-সহ গোটা গান্ধী পরিবারকেই কটাক্ষ করেন তিনি। সোমবার রাতে ভূমিকম্পের তুলনা টেনে রাহুলের উদ্দেশে বলেন, ‘অবশেষে ভূমিকম্প এল। আমি ভাবছিলাম ভূমিকম্প এল কীভাবে? পরে ভেবে দেখলাম এর জন্য দায়ী রাহুল গান্ধীর ‘স্ক্যাম’-এর ব্যাখ্যা। তার কথার কারণেই ধরিত্রীমাতা কেঁপে উঠেছে। কেলেঙ্কারি এবং সেবাকে এক করে দিয়েছেন রাহুল। এক পরিবারের কাছেই গণতন্ত্রের বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা কোনও পরিবারের অবদান নয়।’ এদিন বক্তৃতা দিতে উঠেই বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মোদি। পরে নিজের ভাষণে তাঁদেরও সমালোচনা করেন। এছাড়া মোদি নোটবাতিল থেকে শুরু করে বাজেট এগিয়ে আনার প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক লোকসভার জবাবি ভাষণে আর কী কী বললেন প্রধানমন্ত্রী:
কংগ্রেসের উদ্দেশে:
- ১৯৮৮ সালে বেনামি সম্পত্তি আইন আনা হয়েছিল, কিন্তু কেন ২৬ বছর ধরে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি? কেন এটা এতদিন চেপে রাখা হয়েছিল?
- জবাব আপনাদের একদিন না একদিন দিতেই হবে।
- আপনারা যত বড়ই হোন, গরিবের প্রাপ্য ফেরাতে হবে।
- তাঁরা সবসময় একটি পরিবারের কথা বলেন, কিন্তু কখনই ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলেন না।
- আমাদের মতো অনেকেই আছেন যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মারা যায় নি, কিন্তু আমরা দেশের জন্য বাঁচি এবং দেশের সেবা করি।
- আমরা সাধারণ মানুষের ক্ষমতার কথা ভুলে গিয়েছি। কিন্তু জনশক্তির ওপর বিশ্বাস রাখলে আমরা ফল পাবই।
নোট বাতিল প্রসঙ্গে:
- অনেকই আমাকে নোট বাতিলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
- নোট বাতিলের এটাই সেরা সময় ছিল।
- নোট বাতিলের ফলে আয়কর জমাও বেড়েছে।
- দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী, তাই বিমুদ্রাকরণ সফল হয়েছে।
- ছোট ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।
কালো টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে:
- ক্ষমতায় আসার পরেই আমরা কালো টাকা উদ্ধারের জন্য ‘সিট’ গঠন করেছি।
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
- এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন দেশের কথা বলেছি।
- তারাও তথ্য আদান-প্রদানে উৎসাহী।
সার্জিকাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গে:
- সার্জিকাল স্ট্রাইক অনেক বড় সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু নোট বাতিলের মতো সেই নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি।
- সার্জিকাল স্ট্রাইকের আগে নেতারা অনেক কিছু বলছিলেন।
- কিন্তু পরে দেশের জনগণের মেজাজ দেখে তাঁরা নিজেদের বক্তব্যও পাল্টে ফেলেন।
- আমাদের দেশের সেনার যত প্রশংসা করব, তত কম। দেশকে রক্ষায় তাঁরা পুরোপুরি সক্ষম।
বিরোধীদের উদ্দেশে:
- নোট বাতিল নিয়ে আমরা সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম।
- কিন্তু বিরোধীরা টিভিতে সাক্ষাৎকার দিতে ব্যস্ত ছিলেন।
- আপনারা জানতেন না একটা সমান্তরাল অর্থনীতি চলছিল।
- সবাই জানতেন দুর্নীতি হচ্ছে, এমনকী বিরোধীরাও প্রত্যেকেই জানতেন।
- বিরোধিতা করুন কিন্তু তবে ভাল কাজকেও এগিয়ে নিয়ে যান।
এছাড়া তিনি আরও বলেন:
- ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫৯ গ্রামে নেটওয়ার্ক বসানো হয়েছে।
- গ্রাম-সড়ক যোজনায় অনেক বেশি রাস্তা তৈরি হয়েছে।
- এখন প্রতিবছরে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেললাইন পাতা হয়।
- এক বছরে ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
- আধার কার্ডের সঙ্গে সিলিন্ডার বন্টন জুড়ে দেওয়ায় প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বেঁচে গিয়েছে।
- টাকা বাঁচাতে লোকসভা-বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করার কথা ভাবছি।
- চাষের কাজে এখন আর ইউরিয়া পেতে সমস্যা হয়না চাষিদের।
- ধানে ৫ শতাংশ এবং হমে ১৫ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
- আপনি যতই বড় হন না কেন, গরিবদের প্রাপ্য আপনাকে দিতেই হবে, আমার লড়াই গরিবদের জন্য।
- প্রথমে সবাই বলত কত গেল? এখন সবাই বলছে মোদিজি কত নিয়ে আসলেন।
- আমাদের কাছে নির্বাচন বড় নয়, দেশ বড়। আমরা সবসময় দেশকে নিয়ে চিন্তা করি, নির্বাচন নিয়ে নয়।
- এই সরকারের উদ্দেশ্যই হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা।
- এখন আর মধ্যস্থতাকারীরা কোনওরকম সুযোগ-সুবিধা নিতে পারে না।
- বাজেট পেশের সময় নিয়ে আগে কেউ ভাবেনি। আগে বিকেল পাঁচটায় বাজেট পেশ হত।
- পরে সেই সময় পরিবর্তিত হয়। প্রথম ভেবেছিল অটলবিহারি বাজপেয়ির সরকার। আপনারাও চেয়েছিলেন, তবে পারেননি।