বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সন্দেশখালি না গেলেও মার্চের ৭ তারিখ বারাসতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)। সেখানে মহিলা ন্যায় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। শনিবার থেকে দিল্লিতে বিজেপির দু’দিনের রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে বাংলার নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে বারাসতে মহিলা সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আবার অধিবেশনে সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বঙ্গ ব্রিগেডকে কার্যত তুলোধনা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জানান, সেখানে যা হয়েছে নন্দীগ্রাম থেকে কোনও অংশে কম নয়। রাজ্য সরকার সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। পাশাপাশি দলের রাজ্য নেতাদের আরও সংঘবদ্ধ আন্দোলন সংগঠিত করার পরামর্শ দেন তিনি। এদিন দলের পক্ষ থেকে যে রাজনৈতিক রিপোর্ট পেশ করা হয় ততে সন্দেশখালির ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। এই ঘটনাকে বর্বরতার নিদর্শন বলে রিপোর্টে উল্লেখ কা হয়।
বঙ্গ বিজেপিকে ভোটমুখী করতে অধিবেশনের প্রথদিন থেকেই বাংলা নিয়ে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজনাথ সিং থেকে জেপি নাড্ডা সহ বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন লোকসভায় বাংলা থেকে অধিকাংশ আসন ঘরে তুলতে না পারলে ৩৭০-এর টার্গেট অধরাই থেকে যাবে। শনিবার বৈঠকে প্রথম মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দলের আধিকারিকদের সঙ্গে দরজা বন্ধ ঘরে মোদি জানান, “বাংলার মানুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নপূরণ করার এটাই প্রকৃত সময়। আগামী তিনমাস সেই স্বপ্নপূরণে কোমর বেঁধে লড়াই করতে হবে। আমার বিশ্বাস যেভাবে সকলে লড়াই করছেন তাতে স্বপ্নপূরণ হবেই।” তারই রেশ ধরে প্রকাশ্য অধিবেশনে নাড্ডা জানান, একটা কয়েক বছর আগেও বাংলায় আমাদের তিনটি আসন ছিল। এখন ৭৭ জন বিধায়ক। আগামিদিনে আমরা ক্ষমতা দখল করবই। যদিও মোদি বা নাড্ডার দাবি কীভাবে বাস্তব হবে তা নিয়ে সন্দিহান বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড। বঙ্গের এক প্রতিনিধি জানান, এই রাজ্যে সবচেয়ে বড় বাধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্প।
অন্যদিকে, এদিন অধিবেশনে পেশ করা রাজনৈতিক প্রতিবেদনের ৭ নম্বর পাতায় সন্দেশখালির ঘটনার উল্লেখ করে লেখা হয়, সন্দেশখালির ঘটনায় দেশের মানুষ স্থম্ভিত। স্বাধীনতার পর এমন নৃশংস ঘটনা আগে ঘটেনি। এটা মানবতা বিরোধী ঘটনা। সভ্য সমাজ এই ঘটনা মেনে নেবে না। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মুখে ছিল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। তিনি জানান, “নন্দীগ্রামে জমি দখল মানুষের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই কমিউনিস্টদের পরাজিত করেছিল তৃণমূল। তখন তাঁরা প্রধান বিরোধী দল। এখন বিজেপি সেখানে প্রধান বিরোধী দল। এখানেও জমি দখল ও মহিলাদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে। আমরা জানি রাজ্যের নেতারা লড়াই করছেন। রাজ্যের ওপর চাপ বাড়াতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। সকলে এক হয়ে আরও জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে পরামর্শ দেন।”
একদিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা। অন্যদিকে, মমতার ব্যক্তিগত কেরিশ্মা। তার ওপর গ্রাম বাংলার মহিলাদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা। চিন্তার ভাঁজ চওড়া করেছে গেরুয়া শিবিরের কপালে। আলাদা করে বাংলা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বকে। মহিলাদের মধ্যে মমতার জনপ্রিয়তায় আঘাত আনতে সন্দেশখালি নিয়ে প্রচারের ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন মোদি ও রাজনাথরা। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প কতখানি গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছেছে তা নিয়েও ঘরে ঘরে প্রচার চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, চলতি মাস থেকেই একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যে যাবেন। এদিন অধিবেশনের আগে পদাধিকারী বৈঠকেও বাংলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, “আমার কাছে খবর আছে কোথায় কী হচ্ছে। সব রাজ্যেই আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। আরও বাড়াতে হবে। বাংলাতেও লড়াই দিচ্ছেন কার্যকর্তারা। সেখানেও আরও ভাল ফল করতে হবে।” এর পর প্রকাশ্য অধিবেশনে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জানান, “বাংলাতে আমরা ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম। এখন ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছি। আগামিদিন আমরাই বাংলায় ক্ষমতায় আসবো।”
অধিবেশনস্থলের ভিতর ও বাইরে প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় বারবারই উঠে এসেছে বাংলা প্রসঙ্গ। সন্দেশখালির ঘটনা জানতে চেয়েছেন ভিন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। দল কতখানি ফায়দা তুলতে পারবে তাও জানতে চেয়েছেন। বঙ্গের এক প্রতিনিধি জানান, যেভাবে বাংলা নিয়ে শীর্ষনেতৃত্ব ভাবনাচিন্তা করছে তাতে চাপে পড়তে হবে বঙ্গ ব্রিগেডকে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ রক্ষা করতে গতবারের থেকেও বেশি আসন পেতেই হবে। তবে ভরসা সেই নরেন্দ্র মোদি। তিনি যতো বেশি রাজ্যে আসবেন ততই ভোট বাড়বে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.