নন্দিতা রায় ও রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: নেতাজিকে ঘিরে বাঙালির আবেগ চিরন্তন। আর সেই আবেগকই এবার হাতিয়ার করতে চাইছে দুই রাজননৈতিক দল। সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিবসে কর্মসূচির নিরিখে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই। সেই টেক্কা দেওয়ার খেলায় নয়া সংযোজন বাংলা ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টুইট।
২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিবসে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ভিক্টোরিয়ায় তাঁর কর্মসূচি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে চমক থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে পা রাখার আগেই শুক্রবার দিনভর নিজের ব্যক্তিগত টু্ইটার অ্যাকাউন্টে দিনভর নেতাজী স্মরণ করেছেন মোদি। লিখলেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রিয় ভাই ও বোনেরা, পরাক্রম দিবসের, এই শুভ দিনটিতে আপনাদের মধ্যে আসতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। কলকাতায় এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমরা বীর-কেশরী সুভাষ চন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাব।” যা দেখে ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা, নিজেকে বঙ্গবাসীর সঙ্গে একাত্ম করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। নেতাজির আদর্শকে পাথেয় করার আহ্বানও জানিয়েছেন মোদি।
পশ্চিম বঙ্গের প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
পরাক্রম দিবসের, এই শুভ দিনটিতে আপনাদের মধ্যে আসতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
কলকাতায় এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমরা বীর-কেশরী সুভাষ চন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাব#ParakramDivas https://t.co/FDZtTiQe3O
— Narendra Modi (@narendramodi) January 22, 2021
অন্য একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, “এক আত্ননির্ভর ভারত গড়তে নেতাজির আদর্শ আমাদের পাথেয় হোক। তাঁর মানবিক আদর্শ আরও সুন্দর পৃথিবী গড়তে সাহায্য করবে।” বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই তিনি যে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেছেন সেই বার্তাও টু্ইটার অ্যাকাউন্টে তুলে ধরেছেন মোদি। একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার ২০০৯ সালের কথা মনে পড়ছে। ওই বছর ২৩ জানুয়ারি, আমরা হরিপুরা থেকে চালু করেছিলাম ই–গ্রাম, বিশ্বগ্রাম প্রকল্প। গুজরাটের গ্রামীণ এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধে ছড়িয়ে দিয়ে এক বিপ্লবের কাজ করেছিল ওই প্রকল্পটি। হরিপুরার মানুষের নেতাজি সম্পর্কে আবেগের কথা ভুলব না। ১৯৩৮ সালে নেতাজি যে রাস্তায় হেঁটেছিলেন সেই রাস্তায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে শোভাযাত্রায় হেঁটেছি আমি। হরিপুরার যে জায়গায় নেতাজি ছিলেন সেই জায়গায় সেই জায়গাটিও দেখে এসেছি।” তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটেও যে আজ সমানভাবে নেতাজিকে স্মরণ করা হচ্ছে সেই বিষয়টিও এদিন টু্ইটের মাধ্যমে সামনে তুলে ধরেছেন মোদি। তিনি লিখেছেন, “আগামিকাল ’পরাক্রম দিবস’। নেতাজির জন্মজয়ন্তী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এনিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে বিশেষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে গুজরাটের হরিপুরায়। শুধুমাত্র যে বাংলাতেই নয়, নেতাজিকে যে দেশজুড়ে এমনকী তার নিজের রাজ্যে গুজরাতেও নেতাজিকে সমানভাবে স্মরণ করার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। চলতি বছরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে বলেই কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে সাড়ম্বরে নেতাজি স্মরণ করা হচ্ছে বলেই নানান মহল থেকে কটাক্ষ করা হয়েছে। তার জবাব দিতেই এদিন প্রধানমন্ত্রী ২০০৬ সালের নেতাজী স্মরণের কথা উল্লেখ করেছেন বলেই মত রাজনৈতিকমহলের।
এদিকে পরাক্রম দিবস উপলক্ষে নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তীকে সামনে রেখে সারা রাজ্যজুড়েই মশাল দৌড়ের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপির যুব মোর্চা। আজ উত্তর কলকাতা শহরতলির বাগুইআটি থেকে মশাল দৌড় রয়েছে যুব মোর্চার। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খঁা শুক্রবার জানান, এই মশাল দৌড়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও থাকবেন। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মশাল দৌড় কর্মসূচি চলবে। শুক্রবার উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির উদ্যোগে আর নয় অন্যায় কর্মসূচি উপলক্ষে মিছিল হয় শ্যামবাজার থেকে মহাজাতি সদন পর্যন্ত। ছিলেন সাংসদ অজুর্ন সিং, রাজ্য নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা, দেবজিৎ সরকার প্রমুখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.