সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাঁচ বছরের চেষ্টায় ২,৯৮৯ কোটি টাকা খরচ করে ‘লৌহ মানব’ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। নর্মদা জেলার কেভাদিয়াতে সাধু বেট দ্বীপে ১৮২ মিটার উঁচু এই মূর্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
আজ, বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মশতবার্ষিকী। তাঁর জন্মদিনেই মূর্তি উন্মোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বোচ্চ ইমারত চিনের বিখ্যাত বুদ্ধ মন্দির। বল্লভভাইয়ের মূর্তির উচ্চতা তার থেকেও অনেক বেশি। আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির থেকে প্রায় দ্বিগুণ উঁচু এই মূর্তি। সাধারণ উচ্চতার একজন মানুষের থেকে এই মূর্তি ১০০ গুণ বেশি বড়। প্যারিসের দু’টি আইফেল টাওয়ারের যে উচ্চতা, এই মূর্তির উচ্চতা তার থেকেও বেশি। মূর্তি গড়তে খরচ হয়েছে ২,৯৮৯ কোটি টাকা। নমর্দা বাঁধ থেকে এই মূর্তির দূরত্ব মাত্র সোওয়া তিন কিলোমিটার। সেখানেই সাধু বেট নামে একটি দ্বীপে দাঁড়িয়ে রয়েছে মূর্তিটি। নদীর থেকে দ্বীপে যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আড়াইশো মিটার লম্বা একটি সেতুও। মূর্তি নির্মাণ করতে দেশের ৭০ হাজার গ্রামের বাসিন্দার কাছ থেকে কৃষিতে ব্যবহৃত লোহার দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে এভাবেই পাওয়া ১৩৫ টন লোহা গলিয়ে তৈরি হয়েছে এই বিশাল স্থাপত্য। এই প্রকল্পে একটি তিনতারা হোটেল, অডিটোরিয়াম, প্রদর্শশালা এবং সর্দার বল্লভভাইয়ের জীবন ও কাজ তুলে ধরতে সংগ্রহশালাও নির্মাণ করা হয়েছে। মূর্তির চূড়ান্ত নকশা প্রস্তুত করেছেন বিখ্যাত ভাস্কর রাম সুতার। বল্লভভাইয়ের দু’ হাজারেরও বেশি ছবি দেখে তিনি মূর্তির নকশা তৈরি করেছেন। পৃথিবীর এই উচ্চতম ভাস্কর্য অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। ১৮০ কিলোমিটার বেগের ঝড় ও রিখটার স্কেলে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্পেও এই স্থাপত্যের কোনও ক্ষতি হবে না। মূর্তির বুকে থাকা প্রদর্শশালা দেখতে ওঠার জন্য রয়েছে দু’টি উচ্চগতি সম্পন্ন লিফট। এই লিফটে একসঙ্গে ২০০ জন দর্শক উঠতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন, বিশ্বের উচ্চতম মূর্তিকে ঘিরে দেশের পর্যটন ব্যবস্থায় জোয়ার আসবে। যেরকম আমেরিকায় স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক নিউ ইয়র্কে যান, সেইরকমই উচ্চতম এই মূর্তি দেখতে নর্মদা বাঁধে ভিড় করবেন বিশ্বের মানুষ। পর্যটনকে ঘিরে গড়ে উঠবে হোটেল ব্যবসা, দোকানপাট। স্থানীয় এলাকার আর্থিক উন্নয়নও হবে। সেকথা মাথায় রেখে আইআরসিটিসি বুধবারই একটি বিশেষ ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজকোট থেকে যাত্রা শুরু করবে এই ট্রেন। যার নাম ‘ইউনিটি এক্সপ্রেস’। একটানা ১২ দিন ধরে এই ট্রেন ঘুরবে সর্দার বল্লভভাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন এলাকায়। আপাতত ঠিক হয়েছে যাত্রাপথে এই ট্রেন থামবে সুরেন্দ্র নগর, বিজয়নগরম, সবরমতী আশ্রম, আনন্দ, ভাদোদরা, ভারুচ, সুরাত, ভাপি, কল্যাণ ও পুণেতে। গুজরাতের বাইরে রামেশ্বরম, মাদুরাই, কন্যাকুমারী, ত্রিবান্দ্রম, তিরুপতি, শিরিডি এবং শানিশিংনাপুরেও পর্যটকদের নিয়ে যাবে এই বিশেষ ট্রেন।
প্রথম থেকেই এই মূর্তি নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন ওই অঞ্চলের আদিবাসীরা৷ প্রায় নব্বই শতাংশ পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, আবার নতুন করে পোস্টার লাগাতে হচ্ছে প্রশাসন ও বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের৷ বসানো হয়েছে পুলিশি প্রহরা৷ এলাকায় টহল দিচ্ছে বিশাল পুলিশবাহিনী৷ স্থানীয় এক আদিবাসী নেতা জানান, এই ঘটনাই প্রমাণ করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের উপর কতটা বিক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে আদিবাসী সমাজ৷ এই মূর্তি নির্মাণের ফলে আদিবাসীদের জীবিকা বিপন্ন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ এই আদিবাসী নেতার দাবি, ভাদোদরা থেকে একশো কিলোমিটার দূরে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটা অঞ্চলে এই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছে বিজেপি সরকার৷ এই ফলে চরম বিপদের মুখে পড়েছে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৭৫ হাজার আদিবাসীর জীবন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.