বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) উপস্থিতিতে ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতেই চিন্তার ভাঁজ গাঢ় হয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের কপালে। চার রাজ্যের নেতৃত্বই ভোটের আগাম ফলাফল নিয়ে অশনি সংকেত দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) দল লড়াইয়ে থাকলেও বাকি তিন রাজ্য রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানায় জয়ে সম্ভাবনা ক্ষীণ, জানিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। মধ্যপ্রদেশেও চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া প্রবল বলেও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
জানা গিয়েছে, এহেন পরিস্থিতিতে তাঁকেই প্রচারে আরও বেশি সময় দিতে মোদিকে অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেইসঙ্গে বৈঠকে আসন্ন পাঁচ রাজ্যের ভোট (Assembly Election) লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে করা যায় কিনা সেই বিষয়েও আলোচনা হয়। সেক্ষেত্রে লোকসভা ভোট এগিয়ে এনে একসঙ্গে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন করলে ফলাফলে তার কোনও প্রভাব পরবে কিনা বৈঠকে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। চলতি মাসের মধ্যেই ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যের নেতৃত্বকে এই বিষয়ে সবিস্তার রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ সূত্রে খবর।
দিল্লিতে বিজেপির (BJP) সদর দপ্তরে বুধবার দিনভর পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কৌশল নিয়ে ম্যারাথন বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। মধ্যপ্রদেশের প্রার্থী তালিকা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা সারেন প্রধানমন্ত্রী-সহ শীর্ষ নেতারা। বিজেপি সূত্রের খবর, দুই রাজ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজেপির কয়েকজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। গত মাসে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে রাজস্থানেরও একদফা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে পদ্ম শিবির। কর্ণাটক থেকে শিক্ষা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
গত মার্চে কর্ণাটক (Karnataka) বিধানসভার নির্বাচনে ভোটের আগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া যায়নি। টিকিট না পেয়ে দল ছাড়েন অনেক নেতা। বিজেপি পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে তাই আগেভাগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়ে আগাম ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে চাইছে। বুধবারই রাজস্থানের এক প্রবীণ নেতাকে বহিষ্কার করে বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ঘনিষ্ঠ ওই বিজেপি নেতা প্রার্থী তালিকা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন। তাই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বলে জানান এক শীর্ষনেতা। এদিকে, রাজস্থানে কংগ্রেসের (Congress) মুখ্যমন্ত্রী গেহলট ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের বিবাদ এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। অন্যদিকে, মাথাচাড়া দিয়েছে পদ্ম শিবিরের অসন্তোষ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটিতে বিজেপি প্রথম সারির পদাধিকারীদের রাখেনি।
মধ্যপ্রদেশ নিয়ে বিজেপি এবার বেশি চিন্তিত। চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে (Shivraj Singh Chouhan) নিয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝড় বইছে। তার উপর কংগ্রেস সেখানে নরম হিন্দুত্বের অস্ত্রে বিজেপিকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। হিন্দুত্ববাদী বহু সংগঠনও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি আঁচ করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকেও দলের মুখ হিসাবে তুলে ধরছে না বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সামনে রেখেই দল লড়াই করবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রবীণ শিবরাজের জন্য যা মোটেই সুখকর নয়।
আবার, ছত্তিশগড় (Chhattisgarh) নিয়ে প্রাক্ নির্বাচনী একাধিক সমীক্ষা রিপোর্টে কংগ্রেসের ভূপেশ বাঘেলের সরকারের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস নেতা কমলনাথের মতোই ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল উন্নয়নের পাশাপাশি নরম হিন্দুত্বের রাস্তায় হাঁটছেন যা বিজেপির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দুই রাজ্যে বিজেপির হিন্দুত্বের অস্ত্র সেভাবে কাজে আসবে না বলেই দল মনে করছে। স্বভাবতই পিছিয়ে থাকা ওই দুই রাজ্যে উন্নয়নকেই প্রচারের কৌশল করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। প্রধানমন্ত্রীর একদিনে ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণার পরিকল্পনা সেই কৌশলেই অঙ্গ বলেই জানান এক কেন্দ্রীয় নেতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.