সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নর্মদার তীরে উন্মোচিত হল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি। ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’র উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গোটা দেশ একসঙ্গে দৌঁড়াল একতার জন্য(Run for Unity)। গুজরাট জুড়ে উচ্চারিত হল, এক ভারত, শ্রেষ্ট ভারত, অখণ্ড ভারত।
“এটা আমার সৌভাগ্য. আমি সর্দার সাহেবের মতো মহান নেতার মূর্তি উন্মোচনের সুযোগ পেলাম, আমি কখনও ভাবিনি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি এই মহান কাজ করার সুযোগ পাব। আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। স্বাধীনতার পর এত বছর ধরে একজন মহান নেতাকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার কাজ অপূর্ণ ছিল, বর্তমান তা পূরণ করে দিয়ে গেল।” স্ট্যাচু অব ইউনিটির উদ্বোধন করে এই কথাগুলি বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে যেমন সর্দার প্যাটেলের প্রতি সম্মান রয়েছে, তেমনি রয়েছে গান্ধী-নেহেরু পরিবারের প্রতি কটাক্ষও। মোদি বললেন, আমরা এক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, এই সন্ধিক্ষণ আগামী ভারতকে এগিয়ে চলার প্রেরণা দেবে, এই মুহূর্ত ভারতবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
#WATCH Live: PM Narendra Modi inaugurates Sardar Vallabhbhai Patel’s #StatueOfUnity https://t.co/UD0vsOM1NZ
— ANI (@ANI) October 31, 2018
“দুনিয়ার এই সবচেয়ে বড় মূর্তি, গোটা দুনিয়াকে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সর্দার প্যাটেলের ত্যাগ, সামর্থ্য, এবং সংকল্পের কথা মনে করাবে, সর্দার প্যাটেল যিনি ভারতকে খণ্ড খণ্ড হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। এই মহাপুরুষকে আমার শত শত প্রমাণ। সর্দার প্যাটেল কৌটিল্যের কূটনীতি এবং শিবাজি মহারাজের শৌর্যের সমন্বয়। এক মুহূর্ত ভাবুন যদি সর্দার প্যাটেল গোটা দেশকে অখণ্ড রাখার সংকল্প না করতেন তাহলে গিরের সিংহ দেখতে, শিবভক্তদের সোমনাথ মন্দির দেখতে হলে, হায়দরাবাদের চার মিনার দেখতে হলে ভারতবাসীকে ভিসা নিতে হত।” সর্দার প্যাটেল থেকে শুরু করে আম্বেদকর, নেতাজির মতো নেতাদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছে এই সরকার, দাবি মোদির। তিনি বলেন, “আমরা দেশের মহাপুরুষদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছু মানুষ তার মধ্যেও রাজনীতির রং খুঁজছেন।” প্যাটেল পূজনে মোদির এই বার্তার মধ্যেও কেউ কেউ রাজনীতির রং দেখছেন, শিবভক্ত বলে কি সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর মন্দির দর্শনের হুজুগকে কটাক্ষ করলেন মোদি? প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। কিন্তু এমন গর্বের দিনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনীতি খোঁজাটা কতটা বাঞ্চনীয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে যে মূর্তির উন্মোচন হল, তা সত্যিই গোটা বিশ্বের মধ্যে অনবদ্য এক নজির। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ ইমারত ছিল চিনের বিখ্যাত বুদ্ধ মন্দির। বল্লভভাইয়ের মূর্তির উচ্চতা তার থেকেও অনেক বেশি। আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির থেকে প্রায় দ্বিগুণ উঁচু এই মূর্তি। সাধারণ উচ্চতার একজন মানুষের থেকে এই মূর্তি ১০০ গুণ বেশি বড়। প্যারিসের দু’টি আইফেল টাওয়ারের যে উচ্চতা, এই মূর্তির উচ্চতা তার থেকেও বেশি। মূর্তি গড়তে খরচ হয়েছে ২,৯৮৯ কোটি টাকা। নমর্দা বাঁধ থেকে এই মূর্তির দূরত্ব মাত্র সোওয়া তিন কিলোমিটার। সেখানেই সাধুবেট নামে একটি দ্বীপে দাঁড়িয়ে রয়েছে মূর্তিটি। নদীর থেকে দ্বীপে যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আড়াইশো মিটার লম্বা একটি সেতুও। মূর্তি নির্মাণ করতে দেশের ৭০ হাজার গ্রামের বাসিন্দার কাছ থেকে কৃষিতে ব্যবহৃত লোহার দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে এভাবেই পাওয়া ১৩৫ টন লোহা গলিয়ে তৈরি হয়েছে এই বিশাল স্থাপত্য। এই প্রকল্পে একটি তিনতারা হোটেল, অডিটোরিয়াম, প্রদর্শশালা এবং সর্দার বল্লভভাইয়ের জীবন ও কাজ তুলে ধরতে সংগ্রহশালাও নির্মাণ করা হয়েছে। মূর্তির চূড়ান্ত নকশা প্রস্তুত করেছেন বিখ্যাত ভাস্কর রাম সুতার। বল্লভভাইয়ের দু’ হাজারেরও বেশি ছবি দেখে তিনি মূর্তির নকশা তৈরি করেছেন। পৃথিবীর এই উচ্চতম ভাস্কর্য অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। ১৮০ কিলোমিটার বেগের ঝড় ও রিখটার স্কেলে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্পেও এই স্থাপত্যের কোনও ক্ষতি হবে না। মূর্তির বুকে থাকা প্রদর্শশালা দেখতে ওঠার জন্য রয়েছে দু’টি উচ্চগতি সম্পন্ন লিফট। এই লিফটে একসঙ্গে ২০০ জন দর্শক উঠতে পারবেন।
#WATCH: Inauguration of Sardar Vallabhbhai Patel’s #StatueOfUnity by PM Modi in Gujarat’s Kevadiya pic.twitter.com/PKMhielVZo
— ANI (@ANI) October 31, 2018
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.