সোমনাথ রায়: গত বছর থেকেই পূর্ব লাদাখে মুখোমুখি ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। লালফৌজের আগ্রাসনের মুখে রক্তাক্ত হয় গালওয়ান উপত্যকা (Galwan Valley)। দুই আনবিক শক্তিধর দেশের সংঘর্ষে নড়েচড়ে বসে গোটা বিশ্ব। এহেন পরিস্থিতিতে সীমান্তে কিছুটা শান্তি ফিরিয়ে প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুগুলি থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে নয়াদিল্লি ও বেজিং। তবে সমরসজ্জা কমানোর সিদ্ধান্তে ‘নারাজ’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, চিনের (China) হাতে দেশের জমি তুলে দিয়েছেন ‘কাপুরুষ’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পূর্ব লাদাখ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি জানান, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের সঙ্গে সংঘর্ষের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন এলাকা থেকে ফৌজ সরাতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তারপরই শুক্রবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত সংঘাত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করেন রাহুল। তিনি বলেন, “চিনের সামনে দাঁড়াতে পারেননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি কাপুরুষ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করেননি তিনি। সেনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।” তিনি আরও বলেন, “দেপসাং সমতল, গোগরা-হটস্প্রিং থেকে কেন এখনও চিনা ফৌজ সরে যায়নি? ওই এলাকা দিয়েই ভারতে প্রবেশ করেছে চিন। তা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছুই বললেন না। সত্যি এটাই যে দেশের জমি চিনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে জবাব দিতে হবে।”
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, রাহুল গান্ধীর অভিযোগে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। কারণ, চিনের সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত (LAC) ভাগ করে নিয়েছে ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বেশ কিছু জায়গায় ভারতের জমি দখল করে রেখেছে চিনা বাহিনী। কিন্তু গতকালের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন এলকাতেই সীমিত রয়েছে। লাদাখের দেপসাং সমতল, গোগরা-হটস্প্রিং নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি বলে সূত্রের খবর। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, চিনের সঙ্গে দর কষাকষিতে ভারতের তুরুপের তাস ছিল প্যাংগং। কারণ, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ওই হ্রদের দক্ষিণে কৈলাস রেঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় চূড়া দখল করে নেয় ভারতীয় ফৌজ। ফলে চুশুল সেক্টরে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে যায় লালফৌজ। এই অবস্থান কাজে লাগিয়ে দেপসাংয়ে নিজের অবস্থান মজবুত করতে পারত নয়াদিল্লি। কিন্তু তেমনটা করা হয়নি। ফলে প্যাংগং থেকে ভারতীয় ফৌজকে সরিয়ে দিতে পারলেও নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুতেই সরবে না চিনা বাহিনী। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.