চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: চলন্ত ইঞ্জিনের ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির জল পড়ছে অঝোরে। আর সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এক হাতে ছাতা ধরে অন্য হাতে স্টিয়ারিং সামলাচ্ছেন চালক। মাত্র কয়েক মিনিটের এই ভিডিও, দুর্যোগের মধ্যেও রেলকর্মীদের কর্তব্যে অবিচল থাকার বিজ্ঞাপন হতেই পারত। কিন্তু এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় উল্টে এখন রেলমন্ত্রকই কাঠগড়ায়।
কয়েক মাস আগে খাবারের মান নিয়ে আধাসেনা জওয়ান তেজ বাহাদুরের ভিডিও পোস্ট রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। ঠিক তারপরই তেজ বাহাদুরের সহকর্মীরাও একই ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার পোস্ট করতে শুরু করেন। আর দেশজুড়ে সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় নিন্দার মুখে পড়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রক। সেই ঘা শুকোনোর আগেই এবার ভিলেন রেলমন্ত্রক। ছাদ ফুটো ইঞ্জিনে বৃষ্টি মাথায় কর্তব্যরত রেলকর্মীদের ভাইরাল—ভিডিও রীতিমতো প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে রেলের তাবড় কর্তাদের। রেলকর্মীদের সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ এবং সুরক্ষার দায়িত্ব তবে কার? আর রেলের কর্মীদেরই যদি এই হাল হয়, তাহলে যাত্রীদের উপযুক্ত পরিষেবারই বা গ্যারান্টি কোথায়? বিতর্কিত ভিডিও ঘিরে রেলমন্ত্রকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। খোদ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর নজর টানতে হাতে গরম প্রমাণ পেশ করতেই ভিডিওগুলি আপলোড করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধানবাদ ডিভিশনে তোলা ওই ছাদ ফুটো ইঞ্জিনের তিনটি ভিডিও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবের এখন যাকে বলে হটকেক। জানা গিয়েছে, গোমো প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ওই ছবিটি তোলা হয় গত ২৫ জুলাই। লোকো ইঞ্জিনের কো-পাইলট ভিডিওটি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। ভিডিওয় ধরা পড়েছে, ইঞ্জিনের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। তারই মাঝে একহাতে ছাতা ধরে অন্য হাতে স্টিয়ারিং—সহ অন্য যন্ত্রপাতি অপারেট করছেন পাইলট। পরের ভিডিওর ছবিটি আরও করুণ। সেখানে বৃষ্টির জল থইথই ইঞ্জিনের কেবিনে বসে খাতায় লেখালেখির কাজ করতে দেখা যাচ্ছে কর্তব্যরত চালককে। পাইলট ও কো-পাইলটের ব্যাগ রাখার জন্য শুকনো জায়গা পর্যন্ত নেই। ভিডিওর সঙ্গী অডিও কমেন্ট্রি মেসেজ অনুযায়ী, বি কে মণ্ডল নামে ওই পাইলট তথা চালক গোমোর দিকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
ভিডিওয় অভিযোগ রীতিমতো গুরুতর। বলা হয়েছে, প্রতিবছরই বর্ষার সময় ছাতা মাথায় রেল চালাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন লোকো পাইলটরা। বারবার বলেও রেল প্রশাসন কোনও প্রতিকার করেনি। একটি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ার ভিডিও একইসঙ্গে আপলোড করা হয়েছে। ওই ইঞ্জিনটি মালগাড়ির। সেটির কো—পাইলট মুকেশ কুমার ভিডিও বার্তায় প্রশ্ন তুলেছেন, রেলে সুরক্ষার বড়াই করে এভাবে গাড়ি চালানো কি আদৌ সুরক্ষিত? কেবিনের চারদিকে জল থইথই হয়ে পড়ায় পাইলটকে ডেস্কেই নিজের ব্যাগ রাখতে হচ্ছে। যার জেরে ‘ভিউস্ক্রিন’ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দাঁড়িয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। অন্য আর একটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে, ছাতা না থাকার জন্য কাকভেজা হয়েই গাড়ি চালাচ্ছেন এক লোকো পাইলট। ভিডিওগুলি পোস্ট হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তবে তাতেও রেলের হুঁশ ফেরেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.