সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিড টিকা কোভিশিল্ডে মারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ব্রিটেনের আদালতে এই ওষুধের ভয়াবহতার কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা (Astrazeneca)। সেই ঘটনার পর এবার কোভিশিল্ডের (Covishield) বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল শীর্ষ আদালতে। এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতখানি তার তদন্তের আবেদন জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণেরও আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারী।
ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ওষুধ ভারতে তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই)কে। অতিমারির সময়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষই নিয়েছিলেন কোভিশিল্ডের টিকা। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাঁদেরও। এই পরিস্থিতির মাঝে বুধবার সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বিশাল তিওয়ারি নামে এক আইনজীবী। শীর্ষ আদালতের কাছে তাঁর আবেদন, এই টিকা ঠিক কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ তা খতিয়ে দেখতে এইমসের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হোক। এছাড়া এই টিকার জেরে দেশে যারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকার হয়েছেন তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। সব মিলিয়ে ব্রিটেনের পর কোভিশিল্ড নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হল ভারতে।
২০২৩ সালে ব্রিটেনের আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন জেমি স্কট নামে এক ব্যক্তি। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও তা জমাট বেঁধে যায়। এর ফলে তাঁর মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়। স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও কমে গেছে জেমি স্কটের। পাশাপাশি ব্রিটেনের হাইকোর্টে এই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড দাবি করে ৫১টি মামলা দায়ের হয়। তবে কোনও অভিযোগ মানতে চায়নি সংস্থা। অবশেষে আদালতে সংস্থার তরফে স্বীকার করে নেওয়া হয় এই ভ্যাকসিনের কারণে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম বা টিটিএস নামের বিরল রোগের সম্ভাবনা রয়েছে। নথি পেশ করে আদালতে জানানো হয়, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার কারণে টিটিএস-এর মতো বিরল রোগ হতে পারে। তবে টিকা না নিলেও থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমের ঘটনা ঘটতে পারে। কী কারণে এমনটা ঘটছে সে বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের বিবেচনার দাবি রাখে।’
তবে শুধু ব্রিটেন নয় ভারতেও সিরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন সন্তানহারা বাবা মা। অবশেষে ২০২১ সালে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর করুন্যা নামে এই মহিলার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন করুন্যার বাবা ভেনুগোপালন গোবিন্দা। সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তরফে টিকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, ‘এরা স্বীকার করল তবে অত্যন্ত দেরিতে। ততদিনে বহু মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হতেই মুখ খুলেছেন আইসিএমআর-এর বিজ্ঞানী ডা. রমন গঙ্গাখেদকর। তিনি বলেন, ‘ভয়ের কোনও কারণ নেই। ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র সাত, আট জনের থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর সেই ঝুঁকি কমতে থাকে। বুস্টার ডোজের পর এই ঝুঁকি একেবারেই থাকে না। যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তা দুই তিন মাসের মধ্যেই হবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.