সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোন দিকে এগোচ্ছে ট্রোল-সংস্কৃতি? কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা? কোথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সাইবার সচেতনতা? ‘বাঁকুড়া মিম’ বা ‘স্পেসিফায়েড তারকাটা’ কোথাও যেন দেখিয়ে দিয়েছে, ট্রোল সংস্কৃতি কী ভয়াবহ আকার নিতে পারে! এই সব পেজগুলির অ্যাডমিনকে গ্রেপ্তার করেও লাভের লাভ বিশেষ কিছুই হয়নি। শিক্ষা পায়নি এই দুষ্কৃতীরা। এবার ‘তারকাটা’ সংস্কৃতি বজায় রেখে ‘ডিজিটাল তারকাটা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অশ্লীল ফেসবুক পোস্ট করল।
ইতিমধ্যেই পোস্টটির ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একটি পতিতালয় থেকে বেরোচ্ছেন। পোস্টটির নিচে লেখা, ‘আচ্ছে রাত, এখন বুঝতে পারছেন তো আচ্ছে দিন কেন আসেনি?’ অনেকেই কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের নজরে আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পেজটির অ্যাডমিন বেপরোয়া। এমনকী এই পেজে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়েও অশ্লীল পোস্ট করা হয়েছে। ঠাট্টা করা হয়েছে কলকাতা পুলিশকে নিয়েও। দিনকয়েক আগেই স্পেসিফায়েড তারকাটা’র অ্যাডমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে, অনলাইনে বেয়াদপি সহ্য করা হবে না। কিন্তু পুলিশি হুঁশিয়ারি যে কাজে লাগেনি সে কথা শুক্রবার অভিরূপ পাল ও অঙ্কুশ দত্তর গ্রেপ্তারি থেকেই স্পষ্ট। তথাকথিত শিক্ষিত এই দুই গুণধর এক বন্ধুর ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করে মহিলাদের অশ্লীল মেসেজ পাঠাত।
এর আগে ‘বাঁকুড়া মিম’ নামের একটি ফেসবুক পেজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী পাওলি দামকে নিয়ে একাধিক অশ্লীল পোস্ট করে বিতর্কে জড়ায়। বাদ পড়েননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। পর্নস্টার মিয়া খালিফার পাশেই তাঁর ছবি দিয়ে অশ্লীল পোস্ট করা হয়েছিল। যার তীব্র সমালোচনা করেছিল বাঙালি। কিন্তু তাতেও অবশ্য ট্রোলের জোয়ারে ভাটা পড়েনি। অভিনেত্রী পাওলি দামকে নিয়ে যে মিমে তৈরি হয়েছিল তাতে বাঙালির রুচিবোধের উপরই প্রশ্নচিহ্ন পড়েছিল। সমসাময়িক কোনও ঘটনা নিয়ে ব্যঙ্গ করা নতুন নয়। অতীতে ও বর্তমানে কার্টুনিস্টরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা করেছেন। তবে সে সবের মধ্যে যে শিল্পিত রুচিবোধের ছাপ থাকে, তার ছিটেফোঁটা নেই এই ধরনের ট্রোলে। বরং সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োতে শালীনতার সীমা অতিক্রম করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তৈরি করা মিম-এ সরাসরি কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাঁর। কিন্তু এই পেজগুলিকে চিহ্নিত করতে ও ডিলিট করতে পুলিশকেও বেগ পেতে হয়। বারবার অ্যাডমিন পালটে বা পেজের নাম বদলে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেই সব মানুষ, যাঁরা এই ধরনের পোস্টের নিচে কমেন্ট করে প্রশংসা করেন বা বাহবা দেন- তাঁদের মানসিকতাও কীরকম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। নারীঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো অপরাধের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ‘ভিলেন’ ফেসবুক। এমনটাই মনে করেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। আর সে কারণেই রাজ্যের সাইবার থানাগুলিতে ফেসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের পাহাড় জমেছে। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই সাইবার অপরাধে ফেসবুকের রমরমা।
আর এহেন অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। কিন্তু কেন এই অবস্থা? তদন্তকারীদের অভিযোগ, ন্যূনতম তথ্য মিলছে না ফেসবুক কর্তৃপক্ষের তরফে। ফলে অপরাধীকে শনাক্ত করা গেলেও তথ্যের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অপরাধী। থমকে যাচ্ছে মামলা। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য না মেলায় শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় অন্তত ২৩টি মামলার তদন্ত এভাবেই ঝুলে রয়েছে। গত ছয় বছরে কলকাতায় ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে কয়েক হাজার গুণ। কবে থামবে এই বিপজ্জনক প্রবণতা? প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের সুশীল সমাজ।
দেখুন এই পেজে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কী অশ্লীল পোস্ট করা হয়েছে:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.