দলের অন্দরে তো বটেই এমনকী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও তাঁকে ‘রাজনীতির চাণক্য’ বলেন। তাঁর ড্রয়িং রুমে ঢুকলেই চোখে পড়বে দরজার বাঁদিকে চাণক্যের ছবি ঝোলানো। চাণক্যের সঙ্গে নিজের তুলনায় নারাজ হলেও মুখের সলাজ হাসিই বলে দিচ্ছিল এই তুলনাটা তাঁর পছন্দের। দিল্লির ১১ আকবর রোডের বাসভবনে বসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি, সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করা-এসব নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন-এর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কথা বললেন নন্দিতা রায়।
পশ্চিমবঙ্গকে আপনারা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। হঠাৎ করে এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?
এমনটা নয় যে এবারেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের সংগঠন তৈরির জন্য চেষ্টা করছে। আমরা জাতীয় রাজনৈতিক দল, প্রত্যেক রাজ্যেই আমাদের অস্তিত্ব মজবুত হোক-এটাই আমাদের লক্ষ্য। তবে, বাংলায় যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস বিগত আট-ন’বছর ধরে সরকার পরিচালনা করছে তাতে আমার মনে হয় বাংলায় গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে তৃণমূল কংগ্রেসকে হটানো খুবই জরুরি। কংগ্রেস-সহ বাম দলগুলি আর তৃণমূল কংগ্রেসকে হটাতে পারবে না। একমাত্র বিজেপিই এই কাজ করতে পারে। কিছুদিন আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিলিয়ে ৬০ জন রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। যে দলের সদস্য খুন হয়েছেন সেই দলের কর্মীদের উপরেই কেস চাপিয়ে দেওয়া, মানুষকে ভোট না দিতে দেওয়া, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বাক্স চুরি করে নিয়ে যাওয়া। এই ধরনের ‘মাস রিগিং’ আমি অন্তত দেশের কোনও রাজ্যে দেখিনি।
বাংলায় আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রকাশ্যে বোমাবাজি হচ্ছে। বোমাবাজি করছে এমন কেউ যদি বিশেষ ধর্মের হয়, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। চিটফান্ড থেকে শুরু করে সব বিষয়েই কমিশন নেওয়ার একটা ট্রেন্ড রয়েছে তৃণমূলের সরকারের মধ্যে। এসব দেখে আমাদের সকলেরই মনে হয় যে বাংলার পুরো পরিস্থিতিই রোগগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাকে যদি এগিয়ে আসতে হয়, তাহলে বাংলার জনতার কাছে আমার নিবেদন- আপনারা কংগ্রেসকে গ্রহণ করে দেখেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কমিউনিস্টদেরও গ্রহণ করে দেখেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসকেও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, বাংলার উন্নতি হয়নি। আপনারা একবার বিজেপিকেও গ্রহণ করুন। স্বাধীনতার সময়ে বাংলার যে অবস্থা ছিল, তা খারাপ হয়েছে। দিন বদলেছে। এখন বাংলার উন্নতি করতে হলে তা কেবল ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ করতে পারে, মোদিজি করতে পারেন। তাই আমরা বাংলার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছি।
এবারের নির্বাচনে বাংলার কাছ থেকে আপনি কী আশা করছেন?
শুধু আশা করছি এই কথা বলবেন না। আমি বিগত কয়েক বছরে বহুবার বাংলায় গিয়েছি। পাঁচ বছরে ৮০ দিন আমি বাংলায় থেকেছি। ইতিমধ্যে ১৩-১৪টি নির্বাচনী সভাও করেছি। সেসব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, বাংলাতে আমরা অর্ধেকের বেশি আসন টপকে যাব। এবারে ২৩-এর বেশি আসন আমরা জিতবই।
তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জনপ্রিয় নেত্রী। অথচ আপনাদের কাছে এই রাজ্যের জন্য সেরকম কোনও ‘মুখ’ নেই যাঁকে সামনে রাখা যায়। এই পরিস্থিতিতে আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার সঙ্গে কীভাবে পাল্লা দেবেন?
অনেক সময় এমন হয়, নির্বাচনের পরে ‘মুখ’ সামনে উঠে আসে। নেতৃত্ব উঠে আসে। তাই এমনটা ভাবার কারণ নেই যে আমাদের কোনও ‘মুখ’ সামনে নেই বলে জনতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সহ্য করবেন। এই যুক্তির সঙ্গে আমি সহমত নই। হয়তো সরস্বতী পুজো করছেন, সেই সময়ই স্কুলে দুষ্কৃতীরা গিয়ে মারপিট করছে। রামনবমীর শোভাযাত্রা যাতে না বের হয়, তার চেষ্টা চলছে। এসব নিয়ে বাংলার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে ইসলামপুরের একটি স্কুলে কম্পালসারি উর্দু শিক্ষক পাঠানোর ঘটনা ঘিরে দু’জন ছাত্রের বুকে গুলি করে দিয়েছে। গণতন্ত্রে এই সমস্ত চলতে পারে না।
বাংলার যে রাজনীতির ধারা তা উত্তর ভারতের রাজনীতির ধারার থেকে একেবারেই আলাদা। একই সঙ্গে বিজেপির যে রাজনৈতিক কাঠামো, সেটাও বাংলার রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে মেলে না। আপনারা কীভাবে বিজেপির রাজনৈতিক কাঠামোকে বাংলার সঙ্গে মেলাবেন?
প্রথমেই একটা কথা বলে দিতে চাই। আমাদের দলের যে রাজনৈতিক কাঠামো তা যখন মেলার হবে মিলে যাবে। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের যে রাজনৈতিক কাঠামো তা বাংলাতে ফিট করছে না। এই বাংলা ‘কবিগুরু’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা। স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, ক্ষুদিরাম বোস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা। সেখানে দুষ্কৃতীরা এখন সিন্ডিকেট ট্যাক্স নেবে! বোমাবাজি হবে! অনুপ্রবেশ হবে! গরুপাচার হবে! কী হাল করে দিয়েছে! ‘সোনার বাংলা‘-র যে কল্পনা তাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। তাই আমাদের কাঠামো যখন ফিট হবে, তখন হবে। কিন্তু, এখন যে কাঠামো রয়েছে তা একেবারেই ফিট হচ্ছে না। তাই বাংলার জনতা এঁদের ছুড়ে ফেলে দেবেন।
প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছেন, বিরোধীদের আটকাতে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে তাঁদের পিছনে লাগিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি একথাও বলছেন যে বিজেপি রাজ্যে প্রবেশ করলে তারা দাঙ্গা বাঁধাবে?
দেখুন, নিজেকে বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছু না কিছু সাফাই দিতেই হবে। তাই তিনি এসব বলছেন। আমি তাঁর কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। তবে এটা বলতে চাই যে বর্তমানে দেশের ১৬টি রাজ্যে বিজেপির সরকার রয়েছে। একসময়ে ১৯ রাজ্যে ছিল। কেন্দ্র সরকারও চলেছে এবং দেশ ভালভাবেই চলেছে। বাংলার মানুষ এর সবই জানেন। তাঁরা রীতিমতো পড়াশোনা করেন। বাংলার জনতা শুধুমাত্র বাংলাতেই সীমিত রয়েছেন, তাও তো নয়। দেশের ৬৫ শতাংশ অংশে আমাদের সরকার রয়েছে। যদি বিজেপি প্রবেশ করলে দাঙ্গা হত, তাহলে তো পুরো দেশই জ্বলে যেত। কেন উত্তরপ্রদেশে একটি দাঙ্গাও হয়নি? কেন মহারাষ্ট্রে একটি দাঙ্গাও হয়নি? কেন বিহারে কোনও দাঙ্গা হয়নি? অসমে কেন একটিও দাঙ্গা হয়নি? ত্রিপুরাতে কেন একটিও দাঙ্গা হয়নি? মমতাজি বললেন তো কী হয়েছে! বাংলার জনতা ভাবনাচিন্তা করেন, তাঁদের বুদ্ধি আছে। তাঁরা যথেষ্ট পড়াশোনাও করেন।
আপনি অমিত শাহ, তবে বাংলাতে আপনার নাম ‘অমিত সাহা’ হয়ে যায়?
(হাসি) ওটা ঠিক আছে। আমাকে বাংলার জনতা যে নামেই ডাকতে চান, ডাকতে পারেন। তাঁদের কাছ থেকে আমার শুধু এটুকুই আশা এবং বাংলার জনতার কাছে আমার এটুকুই করজোড়ে নিবেদন- আমাকে যে নামেই তাঁরা ডাকুন, ভালবেসে ডাকলেই হবে।
বাংলার জনসভায় আপনি বলেছেন বিজেপি বাংলাতে ক্ষমতাতে এলে এখানেও ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’, ‘এনআরসি’ লাগু হবে। এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি হয়েছে। আপনার বক্তব্য কী?
এই প্রশ্নটি করে আপনি খুবই ভাল করেছেন। দেখুন, বাংলায় ‘অনুপ্রবেশকারী‘ একটি সমস্যা। অবশ্য শুধু বাংলায় নয়, এটা দেশের কাছেই একটা সমস্যা। ‘এনআরসি‘ আমরা অবশ্যই আনব। একটা একটা করে সব অনুপ্রবেশকারীকে আমরা দেশ থেকে বের করব। তবে, তার আগে এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই, যাঁরা শরণার্থী রূপে এসেছেন তাঁদের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব বিলের একটা খসড়া নিয়ে এসেছি। সংসদে আনা হয়েছে, লোকসভায় তা পাসও হয়েছে। তার মধ্যে আমরা বলেছি যে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান এঁদের মধ্যে যতজন শরণার্থী রূপে এসেছেন। নিজেদের ধর্ম-পরিচয়, ‘রিলিজিয়াস আইডেনটিটি’ বাঁচানোর জন্য এসেছেন, নিজেদের পরিবারের মহিলাদের সম্মান বাঁচানোর জন্য এসেছেন- তাঁদের এখানে নাগরিকত্ব আমরা দেব। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পরে যে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী বাকি থাকবে, ‘এনআরসি’ নিয়ে এসে প্রথমে তাদের চিহ্নিত করে, পরে দেশ থেকে বিতাড়িত করার রাস্তায় এগোব।
‘এনআরসি’ এবং ‘নাগরিকত্ব বিল’ এই দু’টি ইস্যু নিয়েই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে রীতিমতো প্রভাব পড়েছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অসমে খুব হাঙ্গামাও হয়েছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের মনে এই বিল নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচনে এই প্রভাব কতটা পড়ছে বলে আপনার মনে হয়?
এর দু’টি দিকই আছে। বহু শরণার্থী মনে করেন, নাগরিকত্ব বিল এলে আমরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাব। আবার, কিছু লোকের বিরোধিতাও রয়েছে। কিন্তু, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রথমেই আনব এবং তারপরে ‘এনআরসি’ লাগু করব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আপনার কেমিস্ট্রি নিয়ে সব মহলেই অনেক আলোচনা হয়। আপনাদের একসঙ্গে ‘মোদি-শাহ’ জুটিও বলা হয়। এটা নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
(হাসতে হাসতে) আমার আর প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এমনই সম্পর্ক যেমন একজন প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতির মধ্যে থাকে। এর থেকে বেশি দেখার কিছু প্রয়োজন নেই। আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রয়েছি। মোদিজি আমাদের নেতা এবং পুরো বিজেপি তাঁর নেতৃত্বে কাজ করছে। একইভাবে আমিও মোদিজির নেতৃত্বে কাজ করছি। এর থেকে বিশেষ কিছু নয়।
গতবার লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে অত্যন্ত ভাল ফল করাতেই বিজেপির সার্বিক ভাল ফল হয়েছিল। এবারে উত্তরপ্রদেশে সপা-বিএসপি’র ‘মহাজোট’ হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মাঠে নেমেছেন। তিনি বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোট কাটবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সমস্ত বিষয় বিজেপিকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে?
এই সমস্ত বিশ্লেষণ এসি ঘরে বসে টেবিলের উপর তৈরি করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি খুবই জটিল। বাস্তবের মাটিতে নেমে এলে দেখতে পাবেন, একদিকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির পাঁচ বছরের সরকার এবং রাজ্যে দু’বছরের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এই উভয় সরকারের সুবাদেই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জন্য লহর রয়েছে। এবং আমি মনে করি, ‘মহাজোট‘ হলেও আমরা আমাদের ভাল অবস্থা ধরে রাখতে পারব। এবং গতবারের ৭৩-এর থেকে বেশি আসন পেয়ে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসবে।
মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে আপনারা সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করেছেন। তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। উনি নিজেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রচার তিনদিনের জন্য ব্যানও করে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা এসব নিয়ে ইস্যু তৈরি করছে। আপনারা কীভাবে তা সামাল দেবেন?
সাধ্বী প্রজ্ঞার যে টিকিট সে বিষয়ে বলতে পারি, তাঁর নামে মিথ্যে একটা মামলা ‘হিন্দু টেরর’-এর নাম দিয়ে চাপানো হয়েছিল। আর একটা ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’-এর নাম দিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে চাপানো দুটো মামলাই খারিজ হয়ে গিয়েছে। এবং আদালতও বলে দিয়েছে যে, ‘গেরুয়া সন্ত্রাস‘ একটা কাল্পনিক বিষয় এবং এমন কিছু কোনওদিন হয়নি। কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করার জন্য, তোষণ করার জন্য এত বড় হিন্দু সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে বদনাম করেছে। হিন্দু সংস্কৃতিকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এর জবাব কংগ্রেসকে দিতে হবে না কি দিতে হবে না! আমি মনে করি দিতে হবেই। সাধ্বী প্রজ্ঞার প্রার্থীপদ ও ‘হিন্দু সন্ত্রাস’-এর যে ‘ফেক থিওরি’ তার বিরুদ্ধে আমাদের সত্যাগ্রহ। আমি মনে করি, দেশের জনতার জানা দরকার যে ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ একটা কাল্পনিক কথা। কংগ্রেস নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, নিজেদের দলের ভোট বাড়ানোর জন্য, তোষণের জন্য একটি মিথ্যে মামলা তৈরি করেছিল। কিন্তু এসব করার পরেও কী হল? সকলেই তো ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। আপনারা বলুন, সমঝোতা এক্সপ্রেসে যারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তারা কোথায় গেল? তাদের ছেড়ে দেওয়া এমনকী ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে ছেলেখেলা করেছে!
দক্ষিণ ভারতে একমাত্র কর্ণাটক ছাড়া অন্য জায়গায় বিজেপি সেভাবে নেই। আপনারা যেমন দক্ষিণের দিকে নজর দিয়েছেন, কংগ্রেসও তাই করেছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কেরলের ওয়েনাড় থেকে প্রার্থীও হয়েছেন। আপনারা দক্ষিণ ভারত থেকে কীরকম ফল আশা করছেন?
প্রথমেই এটা বলতে চাই যে, রাহুল গান্ধী ওয়েনাড় গিয়েছেন কারণ আমেঠি এবার তাঁর জন্য নিরাপদ নয়। এটাই কারণ। দক্ষিণ ভারতে তো কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এতদিন কেন তিনি সেখানে যাননি? আর বিজেপির জন্য বলতে পারি, কর্ণাটকে আমাদের পরিস্থিতি আরও ভাল করব। তেলেঙ্গানা এবং কেরলেও আমাদের অবস্থা ভাল করার চেষ্টা করছি এবং করবই। তামিলনাড়ুতে আমাদের জোট ভালই চলছে।
আপনাকে ‘রাজনীতির চাণক্য’ বলা হয়। আপনার ঘরেও তো দেখছি চাণক্যর ছবি…
(হাসি মুখে হাত তুলে ঘরের কোণে দেখালেন) হ্যাঁ, তাঁর ছবি তো আছেই। তবে আমার মনে হয় চাণক্যর নাম আমার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিত নয়। চাণক্যের ধারপাশে যাওয়াও আমার মতো সামান্য কর্মকর্তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এটুকুই শুধু বলতে চাই, দেশের মানুষের জন্য নরেন্দ্র মোদিজি বিগত পাঁচ বছরে অনেক কাজ করেছেন। গরিবদের জন্য কাজ করেছেন, কোটি কোটি মহিলা গ্যাসের সিলিন্ডার পেয়েছেন, টয়লেট পেয়েছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, এমনকী ঘরও পেয়েছেন। এই ধরনের যত কাজ হয়েছে তাতে দেশের গৌরব বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোদিজি দেশের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করেছেন। সন্ত্রাসবাদ, নকশালবাদের উপর লাগাম কষেছেন। দেশের মানুষ বিজেপিকে আবারও জেতানোর জন্য তৈরি বলেই আমার মনে হয়। আর, মোদিজি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।
‘জাতীয়তাবাদ’ এবারের নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু। বিশেষ করে পুলওয়ামা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এসব বিষয় নিয়ে একদিকে আপনারা অন্যদিকে বিরোধীরা একে-অপরকে নিশানা করছেন। নির্বাচনে এর প্রভাব কী হতে চলেছে?
এই যে বিরোধীরা প্রমাণ চাইছেন, তাঁদের বলতে চাই তাঁরা পাকিস্তানের টিভি খুলে দেখে নিন। ওখানকার ডিবেট দেখেই জানতে পারবেন কত জঙ্গি মারা গিয়েছে, তাদের কত লোকসান হয়েছে। আর যখন ভারতীয় বায়ুসেনা বলছে তখন তাদের উপর সন্দেহ করার কোনও কারণ থাকতে পারে না। আর আমরা তো সবসময়ই মনে করি, ‘জাতীয়তাবাদ‘ নির্বাচনের ইস্যু হওয়া প্রয়োজন। তাতে কিছু খারাপ নেই।
আপনি দিনভর কাজ করেন। নির্বাচনের সময়ে দিবারাত্র এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। সভা করছেন। তারপরেও রাত পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। এত এনার্জি কীভাবে পান? আপনার ডায়েট-রহস্য কী?
(হাসতে হাসতে) ব্যক্তিগত কথার মধ্যে পড়বেন না। আমি সরল, সাদাসিধে খাবার খাই। আর প্রত্যেক প্রদেশের ভাল খাবার পছন্দ করি। তবে আমি যে ‘নিরামিশাষী’ সেটা তো এতদিনে জেনেই গিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.