ছবি: প্রতীকী
নয়াদিল্লি: ২০১৯ সালের পর ফের খবরের শিরোনামে ইজরায়েলের (Israel) সফটওয়্যার পেগাসাস। এ বার বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অভিযোগ তুললেন, পেগাসাস (Pegasus Project) আড়ি পাতছে দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ফোনে। পাশাপাশি, আড়ি পাতা হচ্ছে মোদির মন্ত্রিসভার সদস্যদের ফোনে এবং আরএসএস নেতাদের ফোনেও। শুধু বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নন, পরবর্তীতে ‘দ্য ওয়্যার’ নামে সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনও জানানো হয়েছে, দেশের একাধিক সাংবাদিক, বিরোধী নেতা-নেত্রী, ব্যবসায়ীদের ফোনে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আড়ি পাতা হয়েছে।
যদিও রাতে কেন্দ্রের সাফাই, এই ধরনের কোনও হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রের পালটা, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার কোনও ভিত্তি নেই। সরকারের তরফে আরও বলা হয়েছে, ভারত একটি মজবুত গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সব নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়। এই প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে ২০১৯-এ পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল আনা হয়েছে। ২০২১-এ আনা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইন, যাতে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
Government of India’s response to inquiries on the ‘Pegasus Project’ media report. pic.twitter.com/F4AxPZ8876
— ANI (@ANI) July 18, 2021
এর আগে রবিবার বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদের অভিযোগের আগেই দুই আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এবং ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করে, ইজরায়েলি এই সংস্থা গোটা বিশ্বে যাঁদের ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পেতেছিল, সেই তালিকায় ভারতীয় রাজনীতিক-বিচারপতি ছাড়াও সিবিআই, ইডির শীর্ষ অফিসারও আছেন। বিদেশি দুই পত্রিকার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতের প্রায় সব বিরোধী নেতানেত্রীকে তো বটেই, মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ কলে আড়িপাতা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি রিপোর্টও নাকি শীঘ্রই প্রকাশ পাবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। যদিও গোটা বিষয়টিকেই একটি ‘শক্তিশালী গুজব’ বলে উল্লেখ করেছেন স্বামী। বিস্ফোরক এই দাবি করে রবিবার সকালে টুইট করেন তিনি। দাবি করেছেন, কাদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে, সেই তালিকা বিস্তারিত পেলেই তিনি প্রকাশ করবেন। সেই টুইটের পালটা উত্তর দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি ওই আড়িপাতার তালিকায় শুধু যুক্ত করে দিয়েছেন, ‘‘…অনেক বিরোধী দলের সদস্যও’’। অর্থাৎ, বিরোধী দলের সদস্যদের ফোনেও আড়ি পাতা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। টুইট করেছেন পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তি চিদম্বরমও। তিনিও পেগসাসের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে স্বামীর মতো স্পষ্ট করে নয়। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘…পেগাসাস বিস্ফোরণ ঘটাতে চলেছে।’ কোনও কোনও মহল থেকে আন্দাজ করে বলা হয়েছে, সোমবার এই বিষয়ে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত সবটাই জল্পনা।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে খবরের শিরোনামে আসে পেগাসাস। সেখানে বলা হয়, সারা পৃথিবীর প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন কূটনীতিক, নেতা, সাংবাদিক ও সরকারি আধিকারিকরা। ভারতের ব্যবহারকারীরাও ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন গবেষক, দলিত আন্দোলনকারী, সাংবাদিক। সেই সময়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাসের কোনও অনৈতিক ব্যবহার করেনি।
পেগাসাস আসলে একটি স্পাইওয়্যার। ইজরায়েল NSO নামের সংস্থার তৈরি এই স্পাইওয়্যারের সাহায্যে তামাম দুনিয়ার রাজনৈতিক এবং সমাজকর্মীদের ফোন থেকে শুরু হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হয়। বছর দুয়েক আগে ভারতেই এই সংস্থার বিরুদ্ধে আড়িপাতার অভিযোগ উঠেছিল। এবারও একই অভিযোগ উঠল। যদিও ইজরায়েলি কোম্পানির দাবি, তারা শুধুমাত্র সরকারি এজেন্সিকে এই সফটওয়্যার দিয়ে সাহায্য করে। ভারতে কীভাবে তাদের সফটওয়্যার দিয়ে আড়িপাতা হচ্ছে সেই অভিযোগ অবশ্য তারা অস্বীকার করেছে। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, বাদল অধিবেশনের ২৪ ঘণ্টা আগেই এই অভিযোগ সামনে আসায় এই নিয়ে উত্তাল হতে পারে সংসদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.