বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম বা মনরেগা তথা একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মজুরি এবং প্রকল্পের উপাদান বাবদ কেন্দ্রের যে টাকা দেওয়ার কথা, তা দিচ্ছে না। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সংসদের গ্রামোন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আবার রাষ্ট্রীয় গ্রাম স্বরাজ অভিযান (RGSA) প্রকল্পের আওতায় রাজ্যগুলিতে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি।
বুধবার কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্যসভায় যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-এর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মজুরি বাবদ ৬,২৩১ কোটি এবং উপাদান বাবদ ৭,৬১৬ কোটি টাকা কেন্দ্রের তরফে বকেয়া। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে এ প্রসঙ্গে বারবার পর্যাপ্ত নথি না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যারা এই প্রকল্পের সুবিধা পান তাঁদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। অর্থাৎ, রাজ্যগুলির প্রাপ্য টাকা অবিলম্বে কেন্দ্র মিটিয়ে দিক, এমনটাই সুপারিশ করেছে কমিটি। কেন্দ্রের এহেন আচরণে দেশের দরিদ্র মানুষ অসুবিধায় পড়বে বলেই কমিটির পর্যবেক্ষণ। রিপোর্টে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “মনরেগার মতো বিশাল অনুপাতের একটি প্রকল্প যা দেশের প্রতিটি কোণে চালু রয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ সুবিধাভোগীকে জব কার্ড হোল্ডার হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে মজুরি দিতে দেরি হলে এবং উপাদান তহবিল আটকে থাকলে অভাবী ব্যক্তিদের অসুবিধা হবে। মনরেগার (MNREGA) সুবিধা এবং অর্থ না পাওয়ায় তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। এই প্রকল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সংকটের সময় দরিদ্রদের সময়মতো ত্রাণ দেওয়া।”
পাশাপাশি কমিটি মনরেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২২-২৩ সালের সংশোধিত খরচের তুলনায় ২০২৩-’২৪-এর জন্য মনরেগার বাজেট বরাদ্দ ২৯,৪০০ কোটি টাকা কমেছে। সে কথা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, “মনরেগার নিয়ন্ত্রণকারী আইনটি গ্রামীণ এলাকার বঞ্চিত অথচ ইচ্ছুক মানুষের কাজ করার অধিকার প্রদান করে। এটি বেকারদের জন্য একটি শেষ অবলম্বন। এর মাধ্যমে তারা পরিবারের ভরণপোষণ করেন। করোনা (Coronavirus) মহামারীর সময়ে মনরেগার ভূমিকা এবং গুরুত্ব কী ছিল, তা সকলেই দেখেছে। তখন এটি দুর্দশার সময়ে অভাবীদের কাছে আশার আলো হিসাবে কাজ করেছিল।”
অন্যদিকে, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বুধবার রাজ্যসভায় রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে, দেশের ৩৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে ১৯টি ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরের জন্য (৩১-১২-২০২২ পর্যন্ত) এই প্রকল্পে কোনও টাকা পায়নি। ২০২১-’২২ সালে ন’টি রাজ্যও কোনও টাকা পায়নি। রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যগুলি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি, কর্মচারী এবং পঞ্চায়েতগুলির অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল পাচ্ছে না। অনেক রাজ্যে এইভাবে তহবিল বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সমস্যা তৈরি করবে। যদিও এই প্রকল্পের লক্ষ্য পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। দেরি না করে অবিলম্বে আরজিএসএ প্রকল্পের টাকা ছাড়ার সুপারিশও করেছে কমিটি। দেশের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে কম্পিউটার কম থাকা এবং ইন্টারনেটের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যাতে শুধুমাত্র জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র জারি করার কাজে সীমাবদ্ধ না থেকে সমস্ত ধরনের বাধ্যতামূলক অনলাইন পরিষেবা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রককে উদ্যোগী হতে হবে বলেও সুপারিশ করেছে কমিটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.