সংসদে গ্যাস হামলা। ছবি পিটিআই
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংসদে (Parliament Attack) স্মোক ক্যান কাণ্ডে ধৃত মূল চক্রী ললিত ঝাকে জেরায় বিস্ফোরক তথ্য মিলল। পুলিশ জানিয়েছে, ‘প্ল্যান এ’ ব্যর্থ হলে ‘প্ল্যান বি’-র প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল সংসদের হামলাকারীরা। তবে ‘প্ল্যান এ’ সফল হয় তাদের। দু’টি দলে সংসদের ভিতরে ও বাইরে তাণ্ডব চলার সময় কাছাকাছি উপস্থিত ছিল ললিত। তবে এরপরেই সে গা ঢাকা দেয়। পুলিশ যখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, সেই সময় বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির কর্তব্যপথের থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে ললিত (Lalit Jha)। তাঁকে তখনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তে ক্রমশ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
তদন্তকারীদের দাবি, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে সহযোগীদের মোবাইল ফোন পুড়িয়ে দিয়েছিলেন ললিত। সাংসদের সই করা পাস থাকায় লোকসভার ভিতরে তাণ্ডবের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাগর শর্মা ও মনোরঞ্জন ডিকে। বাইরে বিক্ষোভ দেখানোর দায়িত্ব ছিল কৈলাস ও মহেশের। তবে তারা গুরুগ্রামে বিশাল শর্মার বাড়িতে (যেখানে আগের দিন রাতে হামলাকারীরা ছিল) সময়ে না পৌঁছনোয় শেষ মুহূর্তে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় অমল ও নীলমকে। যদিও প্রথমে ঠিক ছিল কৈলাস ও মহেশ কোনওভাবে ব্যর্থ হলে অমল ও নীলম যে কোনওভাবে কাজ সম্পূর্ণ করবে। মিডিয়া ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে বলা হয়েছিল তাদের। ওই মহেশও বৃহস্পতিবার ললিতের সঙ্গে থানায় এসেছিল। তাঁকে অবশ্য পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করার পর সেখান থেকেই পালিয়ে যায় ললিত ঝা। দিল্লি থেকে বাসে করে পৌঁছে যায় রাজস্থানের নাগৌরে। সেখানে ২ বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন ললিত। রাতে সেখানকারই একটি হোটেলে ছিলেন। পুলিশ (Delhi Police) তাঁকে খুঁজছে বুঝতে পেরে এরপর বাসে করে নিজেই ফিরে আসে দিল্লিতে।
পুলিশের দাবি, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে সহযোগী মনোরঞ্জন ডি, সাগর শর্মা, অমল শিণ্ডে ও নীলম বার্মার ফোন রাজস্থানে পুড়িয়ে দেয় ললিত। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ললিতকে রাজস্থানের (Rajasthan) হোটেলে থাকতে সাহায্য করেছিল কৈলাস ও মহেশ। পুলিশ কোথায় কোথায় যাচ্ছে, তাও জানত ললিত। বন্ধুদের কাছে কী করা উচিত, সেই পরামর্শও করে সংসদে রং-হামলার মূল চক্রী। এমনকী, ললিতের সহযোগী মহেশও ‘ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাবে’র সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সংসদে হানায় যোগ দিতে চেয়েছিল মহেশও। কিন্তু তাঁর পরিবার রাজি না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে সেই প্ল্যান বাতিল করে সে। উল্লেখ্য, তদন্তে জানা গিয়েছে, সাগর শর্মা, মনোরঞ্জন ডি, নীলম বার্মা, অমল শিণ্ডে, ললিত ঝা এবং বিশাল শর্মা সকলেই ‘ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপের সদস্য। এইভাবেই তাঁদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয়! তারপরই ছক কষা। অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করবে পুলিশ।
সংসদে হামলা কাণ্ডে দিল্লি পুলিশের তরফে পার্লামেন্ট হাউস থানায় (Parliament House Police Station) যে এফআইআর করা হয়েছে, তা চমকে ওঠার মতো। সেখানেই পরতে পরতে চক্রান্ত ও প্রস্তুতি কথা জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই এফআইআরের কপি আদালতে পেশ করা হয়। তা থেকে জানা যাচ্ছে, গত জুলাইতেই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে রেইকি করেছিল হামলাকারীরা। তখনই তারা বুঝে যায় সংসদে প্রবেশের সময় জুতো পরীক্ষা হয় না। এরপরেই তারা ঠিক করে জুতোতেই স্মোক ক্যান লুকিয়ে নিয়ে সংসদে ঢোকা যাবে। পুলিশ জানিয়েছে, সাগর ও মনোরঞ্জনের জুতোর সোল কেটে জায়গা করা হয়েছিল স্মোক ক্যান রাখার। এরপর পুরু রাবার সিট দিয়ে তা ঢেকে ফেলা হয়। লখনউ থেকে বিশেষ দুই জোড়া জুতো কেনে অভিযুক্তরা। ‘মেড ইন চায়না’ স্মোক ক্যান নিয়ে চশমা ও গ্লাভস পরেই হামলা চালাতে আসে তারা। মুম্বই থেকে পাঁচটি ক্যান কেনা হয়েছিল। ক্যানের গায়ে সতর্কীকরণ দেখে পুলিশ আশঙ্কা করছে, এই ‘আপাত নিরীহ’ স্মোক ক্যান থেকে ওইদিন লোকসভায় বড় বিপদ ঘটতে পারত। পুলিশ সেই শঙ্কার কথা এইআইআরেও উল্লেখ করেছে।
এদিকে, কীভাবে তারা স্মোক ক্যান নিয়ে লোকসভায় ঢুকে পড়ল, কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কীভাবে এড়িয়ে গেল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা। সেই কারণেই ঘটনার পুনর্নিমাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার অথবা রবিবার সংসদ হানার পুনর্নিমাণের সম্ভাবনা রয়েছে। গুরুগ্রামের একটি বাড়িতে প্রায়ই দেখা করত অভিযুক্তরা। সেখানেও তাঁদের নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এছাড়া, মুম্বইয়ে যেখান থেকে তারা স্মোক ক্যান কিনেছিল বা লখনউয়ে যেখান থেকে জুতো কিনেছিল সেখানেও ধৃতদের নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। বাকি চারজনের মতো এই কান্ডের মূলচক্রী ললিত ঝাকেও এদিন সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.