ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৃত্যুদণ্ডের আদেশের পুনর্বিবেচনা চান না ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মী তথা গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত কুলভূষণ যাদব (Kulbushan Jadhav)। নিজের আইনি অধিকার প্রয়োগ করে আদালতে সাজা পুনর্বিবেচনার আরজি দাখিল করতে রাজি হননি তিনি। বুধবার এমনটাই জানিয়েছিল পাকিস্তান। এরপরই পাকিস্তানের এই দাবি নিয়ে নানা মহলেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
আর পাকিস্তানের বক্তব্য সরাসরি খারিজ করে দিয়ে ভারতের তরফে বলা হয়েছে, কুলভূষণের উপর নিগ্রহ চালিয়ে, জোর করে এরকম একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বাস্তব মোটেও তা নয়। নয়াদিল্লির মতে, গত চার বছর ধরে পাকিস্তান যে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে, এটা তারই অংশ। যাদবকে যেভাবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে, তা বিচারব্যবস্থার নামে প্রহসন। এখনও যাদব পাকিস্তানের সেনার হেফাজতে রয়েছেন। এটা স্পষ্ট যে, রিভিউ পিটিশন যাতে কুলভূষণ দায়ের না করতে পারেন, সেজন্য তাঁকে নিগ্রহ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক আরও বলেছে, কুলভূষণকে সাহায্য করার জন্য ভারত তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। কিন্তু, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত( ICJ) -এর নির্দেশ ও সমস্ত রীতিনীতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান তাঁর আইনি অধিকার খর্ব করতে অত্যাচার করেছে। বিদেশমন্ত্রকের মতে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুমুল সমালোচনার পর গত বছর পাকিস্তান জানিয়েছিল, সেনা আইনে সংশোধন এনে কুলভূষণ যাদবকে নাগরিক আদালতে আবেদন করার সুযোগ দেবে। যদিও সমস্তটাই যে মিথ্যা আশ্বাস, তা বুধবার ইসলামাবাদের দাবিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারত ওই আইনি সংশোধন নিয়েও এর আগে উদ্বেগ জানিয়েছিল। এখন এক বছর পর পাকিস্তান যেভাবে ইউটার্ন করছে, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছে নয়াদিল্লি।
তাদের অভিযোগ, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের নিরুপদ্রবে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের বাইরে থেকে কোনও আইনজীবীকে কুলভূষণের হয়ে সওয়াল করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কুলভূষণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর, প্রমাণ, আদালতের নির্দেশ—সহ কোনও নথিপত্র ভারতকে দেওয়া হয়নি। তারা প্রতিমুহূর্তে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে চলছে। কুলভূষণকে রক্ষা করতে এবং তাঁর নিরাপদে ভারতে ফেরা নিশ্চিত করতে নয়াদিল্লি যত দূর সম্ভব চেষ্টা করবে বলেও বিদেশমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের হস্তক্ষেপে কুলভূষণের মৃত্যদণ্ড এখনও আটকে রয়েছে। সেখানে ভারত প্রমাণ করে দিয়েছে, নিয়ম মেনে কুলভূষণের বিচার হয়নি। আর ভারতীয় কূটনীতিকদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি। এরপরই চাপের মুখে গত বছরের জুলাই মাসে ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতও কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিল। এখন তা নিয়েই পাকিস্তান নতুন চাল চালতে চাইছে।
বুধবার পাকিস্তানের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, জুনের ১৭ তারিখ সাজা পুনর্বিবেচনার আরজি জানাতে বলা হয়েছিল কুলভূষণ যাদবকে। কিন্তু নিজের আইনি অধিকার প্রয়োগ করে আপিল করতে রাজি হননি তিনি। বরং এই মর্মে আগে দাখিল করা ‘ক্ষমা প্রার্থনা’র আবেদনের দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি। পাক সেনার দাবি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার কাছে মৃত্যুদণ্ড রদ করতে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ করেছিলেন কুলভূষণ। যার অর্থ, নিজেকে গুপ্তচর হিসাবে মেনে নিয়ে অপরাধের শাস্তি কম করার আবেদন করা। যা পাকিস্তানের নৈতিক জয় হিসেবেই প্রমাণিত হবে। গোটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করা যাবে যে, ভারতই তাঁকে গুপ্তচর হিসেবে ইরান ও বালুচিস্তান সীমান্তে পাঠিয়েছিল।
ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মী, ৪৯ বছরের কুলভূষণ যাদবকে ২০১৭ সালে এপ্রিলে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাকিস্তানের সেনা আদালত। আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত কুলভূষণকে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করতে দিতে বলে। তার আগে ওই সুযোগটুকুও দিতে রাজি ছিল না পাকিস্তান। এবং কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা করার কথা বলেছিল আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। পাকিস্তানের দাবি, বালুচিস্তান থেকে কুলভূষণকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৬ সালের ৩ মার্চ। ইরান থেকে সেখানে ঢুকে তিনি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে ভারত বারবার বলে এসেছে, পাক সেনাবাহিনী কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করে। নৌবাহিনী থেকে অবসরের পর সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। কুলভূষণের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগও সর্বৈব মিথ্যা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.