সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৭২ সালে এই টেবিলেই ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সই হয়েছিল ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি। কিন্তু আজ শুক্রবার হিমাচল প্রদেশের রাজভবনের সেই টেবিল থেকেই উধাও পাক পতাকা! পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে সিন্ধুর জলবণ্টন-সহ একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে নয়াদিল্লি। যার পালটা হিসাবে ‘যুদ্ধের ইঙ্গিত’ দিয়ে শিমলা চুক্তি বাতিল করেছে ইসলামাবাদ। আঁর পাক সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের পরই ওই টেবিল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে পড়শি দেশের পতাকা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। তার নেপথ্যে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীর। প্রতিবেশী দেশের পাশে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধে সহায়তা করতে সেনা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। পরের বছর, ১৯৭২ সালের ২ জুলাই বর্তমান পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে শিমলায় বসে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৪ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হয়। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামত করে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা সংক্রান্ত বেশ কয়েকদফা এই চুক্তি। যার মূল নির্যাস, ”এই চুক্তির মাধ্যমে সীমান্ত সংঘাতে ইতি টেনে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মেরামত করার স্বার্থে বন্ধুত্বপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা এবং এই উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে দু’দেশ কাজ করবে।”
কিন্তু ভারতের কড়া পদক্ষেপের পর গতকাল এই ঐতিহাসিক চুক্তি বাতিলের ঘোষণা করে পাক সরকার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এরপর আজই দেখা যায় ওই টেবিল থেকে উধাও পাকিস্তানের পতাকা। কিন্তু ভুট্টো ও ইন্দিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরের ছবিটি এখনও রয়েছে সেখানে। রাজভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, টেবিলে পাকিস্তানের পতাকা নেই। তবে কীভাবে এটা হল তা এখনও জানা যায়নি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি।
ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই চুক্তির। দক্ষিণের মানাওয়ার থেকে উত্তরের কেরান পর্যন্ত সবটাই এই চুক্তির আওতায়। এছাড়া হিমবাহ আচ্ছাদিত এলাকাও এর মধ্যেই পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। শান্তি বিঘ্নিত করতে কোনও তরফে কোনও উসকানি দেওয়া যাবে না। শান্তি বজায়ে পারস্পরিক সমন্বয় রাখতে হবে। চুক্তির এসব শর্ত যে কখনও ভাঙা হয়নি, তা নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তা প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনা। ১৯৮৪ সালের সিয়াচেন এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়ে শিমলা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। এবার, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেই চুক্তি বাতিল করে প্রকারান্তরে যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.