সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের ঝগড়া পুরনো। দেশের উত্তরে অবস্থিত ভূস্বর্গ লাগোয়া সীমান্তে সেনাদের তৎপরতা, নজরদারি লেগেই থাকে। আবার দুর্গম পাহাড়, অরণ্য ঘেরা সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যায় প্রায় সারাবছর। এদেশে বেশিরভাগ জঙ্গি হামলার নেপথ্যে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের যোগ স্পষ্ট। পহেলগাঁওয়ে সাধারণ পর্যটকদের উপর গুলিবৃষ্টির ঘটনাতেও পাকিস্তানিদের ছায়া!
আর তার জেরে পালটা মার দিয়ে সিন্ধুর জলবণ্টন-সহ একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে নয়াদিল্লি। চুপ করে বসে নেই পাকিস্তানও। বাতিল করেছে দু’দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার মূল হাতিয়ার ‘শিমলা চুক্তি’। ১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর মধ্যে শিমলায় স্বাক্ষরিত হওয়া এই চুক্তি আসলে কী? এই চুক্তি বাতিল হলে কী প্রভাব পড়তে পারে দু’দেশের সম্পর্কে? আসুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। তার নেপথ্যে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীর। প্রতিবেশী দেশের পাশে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধে সহায়তা করতে সেনা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। পরের বছর, ১৯৭২ সালের ২ জুলাই বর্তমান পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে শিমলায় বসে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৪ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হয়। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামত করে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা সংক্রান্ত বেশ কয়েকদফা এই চুক্তি। যার মূল নির্যাস, ”এই চুক্তির মাধ্যমে সীমান্ত সংঘাতে ইতি টেনে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মেরামত করার স্বার্থে বন্ধুত্বপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা এবং এই উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে দু’দেশ কাজ করবে।”
ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই চুক্তির। দক্ষিণের মানাওয়ার থেকে উত্তরের কেরান পর্যন্ত সবটাই এই চুক্তির আওতায়। এছাড়া হিমবাহ আচ্ছাদিত এলাকাও এর মধ্যেই পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। শান্তি বিঘ্নিত করতে কোনও তরফে কোনও উসকানি দেওয়া যাবে না। শান্তি বজায়ে পারস্পরিক সমন্বয় রাখতে হবে। চুক্তির এসব শর্ত যে কখনও ভাঙা হয়নি, তা নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তা প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনা।
১৯৮৪ সালের সিয়াচেন এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়ে শিমলা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। এবার, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেই চুক্তি বাতিল করে প্রকারান্তরে যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.