সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জিএসটি চালু হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের উপর বাড়তি করের বোঝা চেপেছে বলে যাঁরা দাবি করছিলেন, তাঁদের একাংশের অভিযোগের সত্যতা মিলল না সেভাবে। কারণ, জিএসটি চালু হওয়ার পরেও ৫৪ লক্ষ ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই জিএসটির আওতায় এক পয়সাও কর জমা দেননি বা করের আওতায় আসেননি। যার অর্থ, ২২ লক্ষ ব্যবসায়ীকে জিএসটি চালু হলেও ট্যাক্সের চাপ একেবারে নিতে হয়নি। স্রেফ রাজনৈতিক কারণে জিএসটি নিয়ে জলঘোলা করছে বিরোধীরা, অভিযোগ কেন্দ্রের। কেন্দ্রের দাবি, যাঁরা আগে কর ফাঁকি দিতেন, তাঁদের কেন্দ্র কর দিতে বাধ্য করেছে বলেই সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন তাঁরা। ৬০ শতাংশ বা ৩২ লক্ষ ব্যবসায়ী জিএসটি নেটওয়ার্কে কর জমা দিয়েছেন।
জিএসটি নিয়ে দেশের নানা মহলে সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সম্ভবত সেই কারণেই দেশজুড়ে অভিন্ন অপ্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’ চালুর একশো দিন পূরণের আগেই তাতে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনে সর্বশক্তিমান জিএসটি কাউন্সিল। নয়া নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক দেড় কোটির টার্নওভারের ব্যবসায় ত্রৈমাসিক রিটার্ন করলেই চলবে। তাতে বলা হয়েছিল ফি-মাস করের ঝক্কি থেকে মুক্তি মিলবে। দ্বিতীয়ত, জিএসটি-তে কম্পোজিশন স্কিমের প্রান্তিক মান ৭৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা পর্যন্ত করা হয়। এর জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্র উপকৃত হবে। তিন, ২০১৮-র ১ এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যেক রপ্তানিকারীর জন্য একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করা হবে। তাতে রপ্তানিকারীদের রিটার্ন ফেরতের প্রক্রিয়া অনেক সহজ হবে। চার, নোনতা, ব্র্যান্ডহীন আয়ুর্বেদিক ওষুধ, হাতে তৈরি সুতো, আইসিডিএস খাদ্য, খাকড়া চাপাটি, রবার থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য, প্লাস্টিক ও কাগজ-সহ ২৭টি পণ্য কমিয়ে ৫ শতাংশ করের স্তরে আনা হয়েছে। ডিজেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের উপরও কর আঠাশ থেকে আঠারো শতাংশ করা হয়েছে। পরিষেবার ক্ষেত্রে জরির কাজ, কিছু জুয়েলারির কাজ এবং ছাপার সামগ্রীতেও করের হার ৫ শতাংশের স্তরে নিয়ে আসা হয়েছে।
পণ্য ও পরিষেবা কর দেশব্যাপী চালু হওয়ার পর তা নিয়ে ব্যবসায়িক মহলে কিছু বিভ্রান্তি, অসন্তোষ ও অসহায়তা দেখা দিয়েছিল। অর্থনীতিকদের দাবি, এর জটিলতাই এর জন্য দায়ী। তাছাড়াও কিছু পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে করের হার বৃদ্ধিও এর অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে। আগেই বিরোধীরা জিএসটি চালুর ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে ‘হঠকারিতার’ অভিযোগ তুলেছিল। সরকার অবশ্য স্বীকার করেছিল, একটি সম্পূর্ণ নতুন কর ব্যবস্থা চালু হলে শুরুতে কিছু সমস্যা হবে। কিন্তু, এরই মধ্যে ২০১৭-’১৮ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিকাশের হার কমে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে জিএসটিকে দায়ী করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার ব্যবসায় জিএসটির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নীরব থাকতে পারে না। অর্থনীতির এই গতি মন্থরতা রোধে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই বলে যখন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তখনই মোদি সরকারের আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জিএসটি নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এই মুহূর্তে ১ কোটির কিছু বেশি ব্যবসায়ী জিএসটি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছেন। যার মধ্যে ৭২ লক্ষ এসেছে পুরনো কর ব্যবস্থা থেকে ও ২৫-২৬ লক্ষ ব্যবসায়ী নতুন করে করদাতা হিসাবে যুক্ত হয়েছেন। অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, মূলত বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশিরভাগ কর সংগৃহীত হয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের উপর চাপ এমন কিছুই বাড়েনি। অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রত্যেকেই সুরাহা চাইছেন, কিন্তু কর জমা দিতে চাইছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.