সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে মঙ্গলবার সাঁড়াশি চাপ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের। একদিকে রাজ্যের লকডাউনের সমসয়ীমা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে আজ থেকে শুরু করে আগামী ২০ দিন লকডাউন থাকবে গোটা দেশ। তবে এই লকডাউনে দেশের অর্থনীতির হাল খারাপ হলেও দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই আগামী দিনগুলিতে গৃহবন্দি হয়ে থাকারই পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে পারে কী এই লকডাউন? কোনও দেশ খুব জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তবে লকডাউনের জেরে পরিবর্তন হতে পারে জনসাধারণের জীবনযাত্রা। এর জেরে দেশের প্রতিটি রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি পুরোপুরিস্তব্ধ। জরুরি পরিষেবা ছাড়া এই সময় আর কিছুই পাওয়া যাবে।
কী কী কাজে বাধা-
- একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। রাস্তায় ভিড় করা যাবে না। রাস্তায় আড্ডা, গল্প, খেলাধূলো কিছুই করা যাবে না।
- কোথাও সাতজনের বেশি জমায়েত করা যাবে না।
- নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যাওয়া যেতে পারে তাতে বাধা নেই।
- ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোলে পুলিশ বাধা দেবে একমাত্র জরুরি পরিষেবার গাড়িতেই ছাড় রয়েছে।সেক্ষেত্রে সংস্থার পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন পুলিশ কর্মীরা।
- হাসাপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময় ও ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় ছাড় পাওয়া যাবে, তাতে কোনও বাধা নেই।
লকডাউনে কী কী খোলা থাকছে–
- কিছু জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তর খোলা থাকবে। যেমন দমকল, পুলিশ, অর্থদপ্তর, এলপিজি, পেট্রোল পাম্প, বিদ্যুৎ, জল।
- খোলা থাকবে হাসপাতাল পরিষেবা, ওষুধের দোকান,ডাক্তারখানা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব।
- রেশন, মুদি দোকান, ফল-সব্জি, দুধের দোকান, মাছ-মাংসের ঘর, হিমঘর, গুদাম এগুলিও খোলা থাকবে।
- ব্যাংক সহ এটিএমগুলি সচল থাকবে। তবে ডিজিটাল লেনদেনেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
- প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যম চালু থাকবে।
- পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও আধা সেনা সক্রিয় থাকবে।
- টেলিকম, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা, কেবল (cable) পরিষেবা, ডাক বিভাগ যথাসম্ভব চালু থাকবে।
- অত্যাবশকীয় পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন সংস্থা চালু থাকবে।
কী কী বন্ধ থাকবে?
- সমস্ত রকমের যান চলাচল বন্ধ থাকবে, আকাশপথে এবং স্থলপথে। তবে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনকারী গাড়ির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।
- সমস্ত দোকান, বাণিজ্যিক সংস্থা, অফিস, কারখানা, ওয়ার্কশপ, গোডাউন বন্ধ থাকবে।
- সমস্ত ধর্মীয় স্থান দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনও ধরনের ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ২০ জনের বেশি একত্রিত হতে পারবেন না।
- আপৎকালীন কারণ ছাড়া, সকলকেই বাড়িতে থাকতে হবে এবং বাড়ির বাইরে বেরোতে হলে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় জরিমানা করার কথা এর আগেই ঘোষিত হয়েছে।
আইন ভাঙলে কী ব্যবস্থা?
- লকডাউন ঘোষণার পর পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারে।
- ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, ৬ মাস জেল এবং এক হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন সঙ্কটে ফেলতে পারে এমন ঘটনা ঘটলেই এই ধারা অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
- ২৬৯ ধারাও প্রয়োগ করা হতে পারে। সংক্রামক ও বিপজ্জনক রোগ ছড়ানোর অভিযোগ উঠলে এই ধারায় ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রেও ছ’মাসের জেল, জরিমানা হতে পারে। জেলের সময়সীমা ২ বছর পর্যন্ত করা হতে পারে।
- মারাত্মক রোগ ছড়ানোর অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ২৭০ ধারায় দু’বছরের জেল ও জরিমানা।
কোয়রান্টিন নিয়ম ভাঙলে ২৭১ ধারা প্রয়োগ করতে পারে পুলিশ। সে ক্ষেত্রেও ছ’মাসের জেল ও জরিমানা দু’টোই হতে পারে।
তবে লকডাউন মেনে চলার পরও সকলের মনে হতে পারে এই রোগের প্রভাব কমবে কিনা? সেই উত্তরে চিকিৎসক-সহ বিশেষজ্ঞরা জানান, এই রোগ নিরাময়ে এখনও কোনও ওষুধের আবিষ্কার না হওয়ায় রোগের সংক্রমণ কমাতে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা কম, ফলে দিনে দিনে কমবে আক্রান্তের সংখ্যাও।তাই সরকার থেকে নিয়ম করে বাড়িতে থাকার জন্য এই লকডাউন ঘোষণা।