শংকর ভট্টাচার্য: কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজ্যে কাউকে অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব না দিয়ে যাওয়া নিয়েও সরব হয়েছে বিরোধীরা। সরকারের খরচেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সস্ত্রীক চিকিৎসা করাতে চলে গিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। থাকবেন প্রায় ১৭ দিন। আবার মার্কিন মুলুকে যাওয়া নিয়েও এক প্রস্থ নাটক হয়েছে তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে। সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল, তিনি ৩ সেপ্টেম্বর, সোমবার যাবেন। কিন্তু রবিববার ভোররাতেই তিনি কেরল ছাড়েন।
[মোদি বিরোধিতার ‘পুরস্কার’! চন্দ্রবাবু নায়ডুকে গ্রেপ্তারির নির্দেশ]
জানা গিয়েছে, বিমানেই নাকি তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ৩৯তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন। কেরল সরকার সূত্রের খবর, মিনেসোটা রাজ্যের রচেস্টারের মেয়ো ক্লিনিকে চিকিৎসা চলছে বিজয়নের। কিন্তু কী হয়েছে, তা সরকারিভাবে জানানো হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, তিনি রুটিন চেক আপে যাচ্ছেন। ব্যস, তার বেশি কোনও প্রশ্ন তুললেই সমস্যা। ফেসবুকে কাসারগোড় জেলার এক যুবক এই বিষয়ে প্রশ্ন করায় তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যকে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যাননি বিজয়ন। একমাত্র তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পমন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে ত্রাণ গ্রহণের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। তাতে সমস্যা হচ্ছে। আবার রাজ্য সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকদের একদিনের বেতন বন্যাত্রাণে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সরব বিরোধীরা। দলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী সরকারি টাকায় বিদেশে, আর রাজ্যে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই ইস্যুতেই সরব হয়েছে বিরোধী কংগ্রেস। সব মিলিয়ে বন্যা মিটতেই কেরলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ঝড়।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, দলেরই পলিটব্যুরো সদস্য বিজয়নের এত আমেরিকা প্রীতি কেন? গত মার্চ মাসেও তিনি গিয়েছিলেন ওই দেশে। তখনও তিনি নাকি ‘চেক আপ’ করিয়েছিলেন। তখনই ঠিক করেছিলেন, ফের যাবেন। বন্যার জন্য আগস্ট মাসে যেতে পারেননি। তা মিটতেই ফের মার্কিন মুলুকে গিয়েছেন। কেরলের বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা রমেশ চেন্নিথালা সোমবার ছিলেন কোচিতে। সেখান থেকেই ফোনে জানালেন, “এমন ঘটনা এর আগে কেরলে ঘটেনি। আগে সি অচ্যুত মেনন, ই কে নায়নার, কে করুণাকরণ বা ওমেন চান্ডিও বিদেশে গিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যকে এমন অনাথ করে নয়। এখন বন্যার পরে পুনর্গঠন পর্ব চলছে। কেউ দায়িত্বে নেই! রাজ্য অনাথ হয়ে থাকবে, তা কেমন করে মেনে নেওয়া যাবে। বন্যার পর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ছন্দ কেটে গিয়েছে। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করতে যাওয়ার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু কাউকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন না কেন? আর এক কথায় সিপিএমের মার্কিন বিরোধিতা সবই নাটক। এখন আবার ত্রাণের নামে সরকারি কর্মচারী আর শিক্ষকদের থেকে থেকে গুণ্ডা ট্যাক্স আদায় হচ্ছে। এই জোর জুলুম মানা যায় না।”
[গণধর্ষণের শিকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সিবিএসই টপার, অভিযুক্ত ১২]
তবে এই যুক্তি স্বভাবতই মানতে নারাজ সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্য বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ভাইকম বিশ্বন তিরবনন্তপুরম থেকে বলেন, কংগ্রেসের কথার কোনও গুরুত্ব নেই। কারণ বন্যার সময়ে ওদের উদ্ধারের কাজে দেখা যায়নি। জল নামার পরে ওরা কাদা ছোড়াছুড়ি করতে নেমেছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ ওদের কথায় কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.