সোমনাথ রায়, জম্মু: জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। এই আবহে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন উপত্যকার নবতম রাজনৈতিক দল আওয়ামি ইত্তিহাদ পার্টি (এআইপি) সভাপতি শেখ আবদুল রশিদ। ক্যালেন্ডার বলছে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি পরবর্তী অধ্যায়ে নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য ২ অক্টোবর পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে রশিদকে। মঙ্গলবার দিল্লির বিশেষ আদালত থেকে জামিন পেলেও তাঁর কাশ্মীরে পা রাখতে পারেন পবিত্র জুম্মাবার, অর্থাৎ শুক্রবারে। আইনি প্রক্রিয়া মেটাতে মাঝের ক’দিন লেগে যাবে বলেই মনে করছেন তাঁর পরিবার ও দল।
রশিদ জামিন পেতেই তাঁর সঙ্গে বিজেপির আঁতাত নিয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি। তাঁর বক্তব্য, “নির্বাচনের ঠিক আগে রশিদের মুক্তি প্রমাণ করে দিল, ওরা বিজেপির বি টিম। উপত্যকায় বিজেপির কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই ওরা চাইছে এআইপি যত বেশি সম্ভব আসন জিতে আসুক।” উল্লেখ্য, এর আগে তিহাড় থেকে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন রশিদ। তা কীভাবে সম্ভব হল, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মেহবুবা। কারণ তিহাড় থেকে কোনওভাবেই ভিডিওবার্তা আসার কথা নয়। সেবারও বিজেপি যোগের দাবি করেছিলেন মেহবুবা। রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান হলেও ইঞ্জিনিয়ার রশিদের জামিন প্রসঙ্গে মেহবুবার সুরেই কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা। প্রচারের ফাঁকে বলেছেন, “এটা যে হবে তা ভালই জানতাম। উপত্যকার মানুষদের বলব ভাল করে চিনে রাখুন, কারা বিজেপির সহযোগী।” একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এআইপি ও তাদের প্রার্থীরা প্রচারের জন্য যে বিপুল খরচ করছে, তা আসছে কোথা থেকে? ওদের উচিত এই হিসাবও দেওয়া।”
বিরোধীদের যাবতীয় বক্তব্য অবশ্য ঝিলম নদীর জলে ফেলে দিচ্ছেন রশিদের পরিবার ও তাঁর দলের কর্মীরা। মুফতির নাম না করেও দলের প্রধান মুখপাত্র ফিরদৌস বাবা বলেন, “ওরা যখন বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের সরকার চালায়, তখন বিজেপি ধোয়া তুলসি পাতা? তবে এসবের মধ্যে আমরা ঢুকতে চাই না। আমরা জানি। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ জানে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সঙ্গে কী অন্যায়টাই না হয়েছে। আমরা এখন ওঁকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি সব বাধা মিটিয়ে জুম্মার মধ্যে উনি চলে আসবেন।”
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবাদে অর্থনৈতিক মদত দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালে আবদুল রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। সেই থেকে জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ত দপ্তরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ারের ঠিকানা দিল্লির তিহাড় জেল। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দু’লক্ষেরও বেশি ভোটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন রশিদ। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে লাঙ্গেট কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। যদিও ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে অংশ নিলেও জিততে পারেননি রশিদ। এবার হয়েছে সেই অসাধ্য সাধন। তিহাড়ে বন্দি বাবার হয়ে প্রচারের কাজ সামলেছিলেন দুই ছেলে আবরার এবং আসরার রশিদ। অর্থের অভাবে আদৌ মনোনয়ন গৃহীত হবে কিনা, সেই ভেবে প্রথমে প্রচারে নামেননি। মনোনয়ন মঞ্জুর হয়ে যেতে শুরু হয় প্রচার। মাত্র দশদিনের প্রচারেই বাবার হয়ে অসাধ্য সাধন করেন আবরার ও আসরার আহমেদ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অন্যায়ভাবে তাঁদের বাবাকে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে যে প্রচার ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.