সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেই যেন কাটল সুর। কাশ্মীর নিয়ে না ভেবে, রাহুল গান্ধীকে জম্মুতে আরও বেশি সময় দেওয়ার ‘পরামর্শ’ দিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বলছে, দ্বিতীয় দফায় জম্মু-কাশ্মীরের ছ’টি জেলার ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ভোটদান হয়েছে ৫৬%। মোট ২৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে গণতন্ত্রের এই উৎসবে সবথেকে বেশি অংশ নিয়েছেন জম্মুর রিয়াসির (৭১.৮১%) ভোটাররা। চমকপ্রদ বিষয় হল, সবথেকে কম ভোটদান হয়েছে শ্রীনগর (২৭.৬২%) জেলায়। কেন্দ্রওয়াড়ি হিসাবে সবথেকে বেশি ভোট দিয়েছেন জম্মুর শ্রী মাতা বৈষ্ণোদেবী (৭৫.২৯%) কেন্দ্রের ভোটাররা। ভোটবিমুখ থাকলেন শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্র লালচক থেকে ২ কিলোমিটার দূরের কেন্দ্র হাব্বা কাদাল (১৫.৮০%)-এর ভোটাররা।
তথ্যের কচকচানির থেকেও এদিন সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল, জোটসঙ্গী কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেতা রাহুল গান্ধীকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার পরামর্শ। সোমবারের পর এদিন জম্মু-কাশ্মীরে দ্বিতীয় দফার ভোটপ্রচারে গিয়েছিলেন রাহুল। আগেরদিনের মতোই এদিনও জম্মু এবং কাশ্মীর–দুই প্রান্তেই কর্মসূচি ছিল লোকসভার বিরোধী দলনেতার। আরও একবার জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণরাজ্যের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি এদিন তিনি যা বললেন, তার নির্যাস, “জম্মু-কাশ্মীরকে বহিরাগতরা চালাচ্ছেন। ফলে তাঁরা সাধারণের সমস্যা বুঝতেই পারছেন না।” এদিন তিনি জম্মুতে ৩০০ জন বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও নানা পেশার মানুষের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন।
বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব যখন কাশ্মীরকে দুয়োরানি করে বেশি নজর দিচ্ছেন জম্মুতে, তখন রাহুলের বারবার এভাবে কাশ্মীরে প্রচার করতে আসার বিষয়টি যেন ভালোভাবে নিচ্ছেন না ওমর। দলীয় প্রার্থীর প্রচারে রবিবার ডাল লেকে শিকারা র্যালিতে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সোমবার রাহুলের প্রচারে তিনি যাবেন কি না। উত্তর এড়িয়ে গেলেও পরেরদিন তাঁর অনুপস্থিতি হালকা আন্দাজ দিয়েছিল। জম্মুর জনসভায় ওমরের বাবা ফারুক আবদুল্লা নিজে থাকলেও সেন্ট্রাল শালটেংয়ে রাহুলের সভায় দেখা মেলেনি এনসির কোনও নেতার। এদিনও যার অন্যথা তো হলই না, উল্টে কার্যত রাহুলের রণনীতির সমালোচনা করে বসলেন ওমর। বললেন, “কাশ্মীরের দু’-একটা আসনের জন্য যা করার ওরা করছে, ঠিক আছে। মাথায় রাখতে হবে, জম্মুর সিংহভাগ আসনই কিন্তু ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা কাশ্মীরে কী করছে, গুরুত্বপূর্ণ নয়। জম্মুতে কী করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, ওরা জম্মুর সমতলে নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করছে না।”
জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কেমন হচ্ছে, তা দেখার জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের এদিন কাশ্মীর নিয়ে যাওয়া হয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে। যার সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। বক্তব্য, কাশ্মীর নিয়ে বাইরে কেউ কোনও কথা বললে সরকার বলে, এটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটি যেমন সত্যি, তেমনই নির্বাচনটাও তো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা কীভাবে হচ্ছে, তা বাইরের দেখানোরই বা কী প্রয়োজন, তাদের শংসাপত্রেরই বা কী দরকার?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.