নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: যুবক-যুবতীদের বিয়ের (Marriage) বয়স একই করার লক্ষ্যে গত বছরের শেষেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন পর্যন্ত তিন বছরের তফাত ছিল। ‘দ্য প্রহিবিশন অব চাইল্ড ম্যারেজ (সংশোধনী) বিল, ২০২১’ বিলটিতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ছেলেদের মতোই ২১ বছর করার কথা বলা হয়েছে। বিলটি বর্তমানে সংসদের স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে। এদিকে ৩১ সদস্যের সংসদীয় কমিটিতে এক মাত্র মহিলা সদস্য হিসেবে তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবকে (Sushmita Dev) রাখা হয়েছে।মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে বিলে একজন মাত্র মহিলা সদস্য রাখা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিলটির বিরুদ্ধে বিরোধীদের আপত্তির জেরেই তা সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠাতে রাজি হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিলটিকে কেন নিয়ে আসা হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, লিঙ্গবৈষম্য দূর করতেই ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের বয়স এক করার প্রস্তাব হয়েছে। সরকারের এই যুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, শুধুই যে লিঙ্গ বৈষম্য নয়, এর পিছনে অন্য গভীর কারণও রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, বিলটি নিয়ে তীব্র বিতর্কের জেরে ৩১ সদস্যের সংসদীয় কমিটি গড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই কমিটিতে মহিলা সদস্য মাত্র এক জন। তিনি তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। এই নিয়েও ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির প্রবীণ নেতা বিনয় সহস্রবুদ্ধের নেতৃত্বে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যতালিকা আপলোড করা হয়েছে রাজ্যসভার ওয়েবসাইটে।
বর্তমানে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর হলেও দেশের বহু জায়াগায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তার আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কখনও বয়স লুকিয়ে, কখনও বয়স ভাঁড়িয়ে নাবালিকা বিয়ের চল লাগাতার চলে আসছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যন থেকে দেখা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দেশের ৩০ শতাংশ বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রীর বয়স আঠারোর নিচেই। গ্রামাঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। কিন্তু কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়ার ফলে তারা পড়াশোনা শেষ করা বা চাকরিতে যোগ দেওয়ার মতো বিষয়গুলি থেকে পিছিয়ে থাকে। আবার, কম বয়স থেকেই মা হওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে যায়। যার ফলে তাদের সন্তান সংখ্যাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি হয়। কেন্দ্র সরকারের অন্দরে বেশ কয়েক বছর ধরেই এবিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। যার ফলশ্রুতি এই নতুন বিল। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে বহুদিন আগে থেকেই চিন্তা ভাবনা করছে, সেকথা আমাদের সকলেরই জানা। সরাসরি জন্মনিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে আসা হলে তাতে প্রচুর সমস্যার তৈরি হতে পারে। তাই ঘুরপথে মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে সেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের রাস্তাতেও কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখতে চাইছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির মতাদর্শগত অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের তরফ থেকে দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে আসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে, তা আনার জন্য পরিস্থিতি বর্তমানে অনুকূল নয় বুঝতে পেরেছে সরকার। তাই মাঝামাঝি একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংঘ পরিবারকেও সদর্থক বার্তা দিতে চাইছে তারা। বিলটি আইনে পরিণত হলেই যে দেশের সব মেয়েদের বিয়ে ২১ বছরের আগে হবে না, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যেমন এখন মেয়েদের বিয়ের আইনি বয়স ১৮ হলেও বছর খানেকের গোঁজামিল দিয়ে দিব্য চলছে নাবালিকা বিবাহ। সেই সময়েও তা চলবে। কিন্তু মেয়েদের বিয়ের বয়স আইনিভাবে ২১ করা হলে সেক্ষেত্রে বয়স লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া হলেও তাতে খুব বেশি হেরফের করার ঝুঁকিও অনেকেই নিতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে আঠারো-উনিশ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবেই অনেকটাই কমে যাবে। আর স্বাভাবিকভাবেই পরিণত বয়েসে বিয়ে হলে মেয়েরা অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এড়ানো, জন্মনিয়ন্ত্রের মতো বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাতে মেয়েদের শারিরীক সুস্থতার পাশাপাশি আখেরে দেশের মঙ্গল হবে, জনসংখ্যার বাড়বাড়ন্ত কম হবে বলেই আশাবাদী সরকার।
আগামীদিনে বিলটি পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ হবে যেখানে মেয়েদর বিয়ের বয়স ২১ হবে। বর্তমানে একমাত্র চিনেই মেয়েদের বয়স ২০ বছর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.