বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আমেদাবাদ: দরিদ্র, দলিত আর সংখ্যালঘুরা মোদি সরকারের কাছে ব্যবসা! মোদি মডেল আসলে লোক-ঠকানো প্রচার। দু’দশক আগে হিন্দুত্ব রক্ষায় খলনায়ক হয়েও আজ ফুটপাতেই বাসা বাঁধতে হয়েছে। ক্ষোভ উগরে দিলেন গোধরা (Godhra) পরবর্তী তাণ্ডবের ‘হিন্দুত্বের মুখ’ অশোক পারমার (Ashok Parmar)। তবে পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক কুতুবউদ্দিন আনসারি (Kutubuddin Sheikh)।
অমিত শাহদের দেওয়া ‘শিক্ষা’য় ‘চিরস্থায়ী শান্তির’ গুজরাটে (Gujarat) আজও কুড়ি বছর আগের আতঙ্ক তাড়া করে কুতুবউদ্দিনদের। তাঁর মতে, মানুষ দেশ ও রাজ্য শাসনের দায়িত্ব যাঁদের উপর দেয় তাঁদের সব সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে। নইলে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে কুড়ি বছর আগে দুই মেরুতে থাকা অশোক ও কুতুবউদ্দিন এখন পরমাত্মীয়। অশোকের জুতোর দোকান উদ্বোধনে আমন্ত্রণ পান কুতুবউদ্দিন। আবার কুতুব ভাইয়ের জামাকাপড় তৈরির ব্যবসা কেমন চলছে, নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন অশোক।
দু’দশক পার করেও গুজরাটা দাঙ্গার (Gujarat Riot) ভয়াবহতা আজও দেশের মানুষের কাছে সমানভাবে উজ্জ্বল। দাঙ্গার দুই মুখ আজও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। সেই দিনের কথা এখনও ভুলতে পারেননি কুতুবউদ্দিন ও অশোক। প্রথমজন দাঙ্গা বিধ্বস্ত গুজরাটের সংখ্যালঘু মানুষের রক্ষাকর্তা। দু’দশক পেরিয়ে আজ কাপড় ব্যবসায়ী। এতকিছুর মাঝেও কলকাতার অবদান ভুলতে পারেননি কুতুবউদ্দিন আনসারি। কলকাতার মানুষের কাছে আজও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই প্রচারবিমুখ কুতুব কথা বলতে রাজি হন।
এতবছর কেটে গেলেও সেই সময়কার ভয়াবহতা ভুলতে পারেননি। জানালেন, রাজনৈতিক কারবারিরা নিজেদের স্বার্থে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। দেশের সংবিধান সেই কথা বলে না। সব সম্প্রদায়ের মানুষের বাসযোগ্য ভারত। কিন্তু যে বিভেদের রাজনীতি চলছে তা কখনওই কাম্য নয়। দাঙ্গার পর ফিরে আসতে ভয় করেনি? প্রশ্নের জবাবে কুতুবউদ্দিন যা জানালেন তা অবাক করে দেওয়ার মতো। ভারতের আমেদাবাদ (Ahmedabad) শহরের বিরজুনগর আমার জন্ম ও কর্মভূমি। কী করে ছেড়ে থাকি। আর সেইসময় যাঁরা বিপদের মধ্যে দাঁত কামড়ে ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে ছিলেন তাঁদের কথা ভেবেই কলকাতা ছেড়ে ফের ফিরে আসা।
কুতুবউদ্দিন সতর্ক হলেও মোদি-অমিত শাহদের নাম শুনলেই প্রকাশ্য রাস্তায় ক্ষোভ উগরে দেন হিন্দুত্বের মুখ অশোক পারমার। তাঁর উপলব্ধি, আমাদের ব্যবহার করে মোদি (Narendra Modi) মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। অমিত শাহ (Amit Shah) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার শীর্ষে গিয়েছেন। আর আমাদের মতো দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আসলে পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষ মোদিদের মতো নেতাদের বাজারি পণ্য। তিনি জানান, দু’দশক পার করে আজ মনে হয় সেই দিন উত্তেজনাবশত যা করেছিলাম তা ঠিক করিনি। দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার হয়েছিলাম। রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হয়েছিলাম বলেই আজও ফুটপাত আমার ঠিকানা। মোদি-শাহরা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাজপ্রাসাদে ঠিকানা করে নিয়েছেন।” তবে তিনি কারও প্রাণ নেননি বলে দাবি অশোকের। একজনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে কোর্টে সাক্ষী দেয়নি বলে জানান। হিন্দুত্বের ঠিকাদাররা কখনওই প্রকৃত গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করে না বলেই মনে করেন তিনি।
হিন্দুত্বের মুখ অশোক দিল্লি দরজার সামনে ফুটপাতে দিনযাপন করেন। মানুষের জুতো সেলাই করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন পাশের একটি স্কুলের একচিলতে ঘরে। তবে কুতুবউদ্দিনের ভরা সংসার। গুছিয়ে ব্যবসা করছেন। আর আশার কথা, আজ দু’জনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক স্থাপনের কারিগর অবশ্য কেরল সিপিএম (Kerala CPM)। কয়েকবছর আগে সিপিএমের ডাকে একটি অনুষ্ঠানে কান্নুরে যান কুতুবউদ্দিন ও অশোক। সেখানকার নেতৃত্ব ও মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর ‘দুই বন্ধুর’ একসঙ্গে পথচলা। তবে অশোকের পরিস্থিতির কথা ভাবলেই চোখে জল আসে কুতুবউদ্দিনের। এতকিছু করেও জীবনযন্ত্রণা আজও সমানভাবে চলছে ভেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.