সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রেক্ষিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর বক্তব্যে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লার প্রসঙ্গও ছিল। তাঁরা উসকানি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ এরপরই জন সুরক্ষা আইনের আওতায় ফের তাঁদের আটক করে রাখার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্র। শুক্রবার সকালে এর প্রতিবাদে সংসদের ভিতরে সরব হয়ে উঠল বিরোধীরা। ঠিক কী কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে এইভাবে দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল। বিষয়টি নিয়ে শাসকদল বিজেপির সাংসদদের সঙ্গে কথা তাদের কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল সংসদ। তার আগে এর প্রতিবাদে টুইট করে প্রতিবাদ জানান প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাংসদ ও মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়ানও।
গত আগস্টে ভূস্বর্গ থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করার পর থেকেই আটক রয়েছেন মেহবুবা ও ওমর। সম্প্রতি তাঁদের এইভাবে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই গতকাল রাত পর্যন্ত তাঁদের আটক করে রাখার কথা ছিল প্রশাসনের। কিন্তু, আচমকা রাতের বেলায় তাঁদের ওপর ফের ১৯৭৮ সালের জম্মু ও কাশ্মীর জন সুরক্ষা আইন লাগু করা হয়।
ওই আইন অনুযায়ী, রাজ্য বা স্থানীয় এলাকায় শান্তিভঙ্গ হতে পারে এই সম্ভাবনা থাকলে যেকোনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে প্রশাসন। এমনকী বিনা বিচারে তিন মাস থেকে দুবছর পর্যন্ত তাকে আটকেও রাখতে পারে। এর আগে ওমরের বাবা ও কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাকেও একই আইন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC)-র সাধারণ সম্পাদক আলি মহম্মদ সাগর ও PDP নেতা সরতাজ মাদনি এবং প্রাক্তন আইএএস আধিকারিক শাহ ফয়জলকেও এই আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সেই একই আইনের ভিত্তিতে আটক করা হয় ওমর ও মেহবুবাকে।
এরপরই এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে বিরোধীরা। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী টুইট করে প্রশ্ন তোলেন, ‘কীসের ভিত্তিতে ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির ওপর জন সুরক্ষা আইন লাগু করা হয়েছে ? ওনারা ভারতীয় সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বুঝিয়ে মূলস্রোতে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কোনওদিন হিংসা ও বিভাজনের রাজনীতিকে সমর্থন করেননি। তারপরও তাঁদের সঙ্গে এভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে চিদম্বরম টুইট করেন, ‘কোনও চার্জ ছাড়া কাউকে আটক করা হল গণতন্ত্রের সবচেয়ে নোংরা দিক৷ যখন অবৈধভাবে কোনও আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে? আমি স্তম্ভিত ও বিধ্বস্ত৷’
বিষয়টি নিয়ে সংসদের বাইরে সরব হন বহরমপুরে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরিও। এর আগে কোনওদিন কাশ্মীরের সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করেনি কোনও সরকার। যা এখনকার সরকার করছে। এর ফলে কাশ্মীর শারীরিকভাবে আমাদের সঙ্গে থাকলেও মানসিকভাবে নেই। গতকাল সংসদে ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর তারপর রাতেই তাঁদের বিরুদ্ধে জন সুরক্ষা আইন লাগু করা হল। আপনি এভাবে কোনওদিনই কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.