সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে সারা দেশেই ধাক্কা খেয়েছে এনডিএ। কিন্তু এরই মধ্যে যে রাজ্যগুলোয় গেরুয়া শিবির জয়ের রাস্তায় অনায়াসে হেঁটেছে তার মধ্যে অন্যতম অবশ্যই ওড়িশা। লোকসভার পাশাপাশি সেখানে বিধানসভা নির্বাচনও ছিল। আর সেখানেও বাজিমাত করেছে বিজেপি।
এখনও পর্যন্ত যা হিসেব মিলেছে, তাতে বোঝা গিয়েছে ওড়িশায় (Odisha) লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জয় বা এগিয়ে ১৯টি আসনে। বিজেডি জিতেছে মাত্র একটিতে। অন্যদিকে বিধানসভায় ১৪৭ আসনের মধ্যে ৮০ আসনে এগিয়ে বিজেপি (BJP)। যার মধ্যে ২৩টি আসনে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এগিয়ে ৫৭টি আসনে। অন্যদিকে বিজেডি (BJD) ১৬টি আসনে জিতেছে। এগিয়ে ৩৩টি আসনে। অনেক পিছনে কংগ্রেস। দুই জয়, ১১টি আসনে লিড। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গেরুয়া শিবিরের ওড়িশায় সরকার গঠনের সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। কেননা ‘ম্যাজিক ফিগার’ ৭৪ পেরিয়ে গিয়েছে তারা। ফলে নবীন পট্টনায়েকের দল আড়াই দশক পরে ওড়িশার মসনদ থেকে ছিটকে যাচ্ছেই। নয়া নজির গড়ছে বিজেপি।
কীভাবে সম্ভব হল বিজেপির এই সাফল্য? নবীন পট্টনায়েকের এতদিনের রাজপাটে যতিচিহ্ন টানা সহজ কাজ ছিল না। আসলে দীর্ঘদিন ধরেই ওড়িশায় পায়ের তলার জমি ক্রমশই শক্ত করেছে বিজেপি। তাদের টক্কর দিতে ‘হিন্দুত্বে’ই জোর দিতে চেয়েছেন নবীন পট্টনায়েক। অন্যদিকে জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যময় রত্নভাণ্ডারকে ইস্যু করে তুলেছেন মোদি। ২০১৮ সাল থেকে রত্নভাণ্ডারের একটি চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। পুরীর জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার খোলার জন্য দরকার মোট ৩টি চাবি। ১টি চাবি থাকে গজপতি রাজার কাছে, ১টি চাবি থাকে মন্দিরের সেবায়ত ভাণ্ডারে। আরেকটি অর্থাৎ তৃতীয় চাবি থাকে পুরীর জেলাশাসকের দায়িত্বে। এই তৃতীয় চাবিটি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এই তৃতীয় চাবিটি হারানোর নেপথ্যের রহস্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। ওড়িশার বিজেডি (BJD) সরকারের ভূমিকা এক্ষেত্রে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন মোদি (PM Modi)। কেবল মোদিই নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও একই ভাবে রত্নভাণ্ডারের চাবির উল্লেখ করে আক্রমণ শানিয়েছেন। পুরীর বিজেপি প্রার্থী সম্বিৎ পাত্রর হয়ে প্রচারে এসে এই ইস্যুতেই বেশি জোর দিয়েছেন তাঁরা।
আরও একটি বিষয় বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি উদ্বোধন তথা ‘লোকার্পণ’ হয় দ্বাদশ শতাব্দীর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের হেরিটেজ করিডরের। উদ্বোধন করেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ওই করিডর তৈরি করা হয়েছে। পুরী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষরা করিডর নিয়ে খুশি হলেও স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল। দাবি, যেভাবে নয়া করিডর গড়তে বহু পুরনো মঠ (যার অনেকগুলোই ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো) ভেঙে ফেলা হয়েছে তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। পথের ধারের বহু দোকানদারকে উৎখাত করা হয়েছে। কোনও বিকল্প দোকানও দেওয়া হয়নি। পুরীর এক সমাজকর্মীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”সিংহদুয়ার কু সিঙ্গাপুর কোরো না।” অর্থাৎ মন্দিরের ঠিক বাইরের যে সিংহদুয়ার অঞ্চল, তাকে ‘সিঙ্গাপুর’ বানাতে চাইছে নবীন পট্টনায়েক সরকার। একে কেবলই এক টুরিস্ট হাব করে তোলায় আপত্তি ওই সমাজকর্মীর। এমন মত যে তাঁর একার ছিল না, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে ভোটের ফল। সব মিলিয়ে ওড়িশার সাফল্যের কথা বলতে গেলে দ্বাদশ শতাব্দীর জগন্নাথ মন্দির ও জগন্নাথদেবকেই প্রধানতম ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.