সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২১ সালে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলাদের তালিকা প্রকাশ করল ফোর্বস ইন্ডিয়া (Forbes India)। সেই তালিকায় স্থান পেলেন ওড়িশার (Odisha) ৪৫ বছরের আদিবাসী মহিলা মাতিলদা কুল্লু। ব্যাংকার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী রসিকা দুগ্গলের মতো বিখ্যাতদের সঙ্গে তালিকায় মাতিলদা কুল্লুর অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে দেয়, ক্ষেত্র যতই ছোট হোক নিজের মতো লড়াই চালিয়ে গেলে একদিন গোটা বিশ্বের কাছে নিজের কাজকে তুলে ধরা সম্ভব।
পেশায় তিনি আশাকর্মী (ASHA worker)। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার গর্গডবহল গ্রামে গত ১৫ বছর ধরে কর্মরত তিনি। কুসংস্কারের বিরাট প্রভাব ছিল ওই গ্রামে। গ্রামবাসীদের মধ্যে কালো জাদু নিয়ে অটুট বিশ্বাসের জায়গাটিকেই বদলে দিয়েছেন মাতিলদা। এই ধরনের সামাজিক অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন সাধারণ মানুষকে। কাজটা সহজ ছিল না। সেই কঠিন কাজই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সম্পন্ন করে সকলের নজরে এসেছেন তিনি।
কতটা কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়েছিল মাতিলদাকে? তাঁর কথায়, ”মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পছন্দই করত না। আমি যখন ওঁদের হাসপাতালে যেতে বলতাম তখন ওঁরা উলটে আমাকে উত্যক্ত করতেন। সেই সঙ্গে জাতপাতের দ্বন্দ্বেরও মোকাবিলা করতে হয়েছে। ওঝার কাছে না গিয়ে ডাক্তারের যাওয়াটা কতটা বেশি যথাযথ পদক্ষেপ, তা বোঝাতে অনেক বছর লেগেছে।”
ওড়িশা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন ৪৭ হাজার আশাকর্মী। তাঁদের সকলের মতোই মাতিলদারও হাতজোড়া কাজ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া থেকে সদ্যোজাতদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া, সদ্য মায়েদের স্তন্যপানের গুরুত্ব বোঝানো, সাধারণ ও যৌন অসুখের মতো সংক্রমণ রোখার বিষয়ে অবগত করার মতো অজস্র সমাজসেবার কাজ তাঁকে করতে হয়। আর বছরের পর বছর ধরে সেই কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন তিনি। মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে তাঁর এই প্রয়াসই শেষ পর্যন্ত তাঁর কীর্তিকে আলোকিত করল।
করোনাকালে তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৫০টি বাড়িতে গিয়ে কোভিড পরীক্ষা হোক কিংবা সাধারণ মানুষকে করোনা টিকাকরণের গুরুত্ব বোঝানোর বাড়তি দায়িত্বও হাসিমুখে সামলেছেন মাতিলদা। নিজের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করেই। অবশেষে তিনি স্থান পেলেন ফোর্বসের তালিকায়। অথচ এমন কাজের জন্য তাঁর মাসিক রোজগার একেবারেই সামান্য। মাতিলদার কথায়, ”করোনার সময় একবার রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এককালীন ২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি রোজগার করতে পারিনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.