সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রামায়ণের একেবারে গোড়ার দিকে শ্রবণ কুমারের কাহিনি মনে পড়ে? বাঁকে করে অন্ধ মা-বাবাকে তীর্থ করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রবণ কুমার। লকডাউনের আবহে সেই দৃশ্যই এবার বাস্তবের মাটিতে নেমে এল। একটু অন্যভাবে। বাড়ি ফেরার তাগিদে বাঁকে করে দুই সন্তানকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন বাবা। যে ছবি দেখে চোখ ভিজছে নেটদুনিয়ার।
লকডাউনে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা কতটা অসহায়, কতখানি করুণ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের, সেটাই বারবার সামনে আসছে। কখনও ক্লান্ত শিশুকে স্যুটকেসের উপর শুইয়েই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মা, তো কখনও দাঁতে দাঁত চেপে প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করেই হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল। উদ্দেশ্য একটাই। ভিনরাজ্য থেকে নিজের ভিটেতে পৌঁছনো। ফের একই ছবি ধরা পড়ল জজপুর থেকে ওড়িশা যাওয়ার পথে। পেটের টানে জজপুরের এক ইটভাটায় কাজ নেন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের আদিবাসী সম্প্রদায়ের রূপায়া টুডু। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মধ্যে সেখানেই আটকে পড়েন। অর্থাভাবে ইটভাটা বন্ধ করেন মালিক। শ্রমিকদের বকেয়া দিতেও অস্বীকার করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না টুডুর কাছে। এভাবে আর কতদিন কাটানো যায়। তাই ঠিক করেন ১৬০ কিলোমিটার হেঁটেই অতিক্রম করবেন। তবে একা নন, দুই সন্তানকে সঙ্গে করে। কাঁধে পরিবারের অন্ন সংস্থানের ভার তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে কাঁধে দুই সন্তানকেও তুলে নিলেন অসহায় পিতা। বাঁকে করে চার আর আড়াই বছরের দুই ছেলেকে দুদিকে বসিয়ে পা টেনে এগিয়ে চলেন গন্তব্যের দিকে। মায়ের হাত ধরে এগিয়ে চলল ৬ বছরের মেয়ে পুষ্পাঞ্জলি।
প্রথমে কোলে নিয়েই পথ চলা শুরু করেছিলেন। পরে বুদ্ধি করে নিজেই বানিয়ে নেন সন্তানদের বহনের বাঁক। এরপর কাঁধে বাঁক নিয়ে ১২০ কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে শুক্রবার সন্ধে সপরিবারে গ্রামে পৌঁছান টুডু। লক্ষ্যে সফল হয়ে বলেন, “আমার কাছে তেমন টাকা-কড়ি ছিল না। তাই ঠিক করি হেঁটেই বাড়ি ফিরব। টানা সাতদিন হেঁটে গ্রামে পৌঁছলাম। মাঝে মাঝে কাঁধে যন্ত্রণা হচ্ছিল। কিন্তু আর তো কোনও উপায় ছিল না।”
তবে গ্রামে ফিরেও স্বস্তি মেলেনি। গ্রামে ঢুকতেই তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। কিন্তু সেখানে ছিল না পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা। পরে বিডিও খবর পেয়ে খাবারের বন্দোবস্ত করেন। ওড়িশা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই ২১ দিন থাকতে হবে টুডু ও তাঁর পরিবারকে। তারপর বাড়ি ফিরে আরও সাতদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.