সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন৷ জানিয়েছেন নাগরিকত্ব হারানো লক্ষ লক্ষ ‘অসমবাসী’দের বিরুদ্ধে এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না৷ কিন্তু তাতেও ভয় কাটছে না সাধারণ মানুষের৷ প্রশ্ন উঠছে, এই লক্ষ লক্ষ অসমবাসীর ভবিষ্যৎ কী হবে? রোহিঙ্গাদের মতোই ঘরছাড়া, রাজ্যছাড়া মানুষ হয়ে কি তাঁরা থেকে যাবেন?
এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই৷ ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আপডেট করা হল৷ তাতে বাদ পড়ছে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম৷ এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাভাষী মুসলমান৷ কেউ কেউ আছেন যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন৷ বালাদেশ অনুপ্রবেশ অসমের ক্ষেত্রে বড় একটা সমস্যা৷ দীর্ঘদিন ধরে তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অসমের ভূমিপুত্ররা৷ আন্দোলন হয়েছে, রক্তপাতও হয়েছে৷ এনআরসি আপডেটের সময় তাই ঠিক করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যাঁরা এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ দিতে হবে৷ সেই নিরিখেই বাদ গিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম৷ তবে এটাই চূড়ান্ত তালিকা নয়৷ খসড়া মাত্র৷ এরপর ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন মানুষ৷ সেখানে পরিচয়পত্র দেখাতে পারলে তালিকায় নাম উঠতে পারে৷ কিন্তু তারপরও বেশ কিছু মানুষের যে নাম থাকবে না তা স্পষ্ট৷ এবং সেই সংখ্যাটিও লক্ষাধিক হবে৷ সেক্ষেত্রে তাঁদের কী পরিণতি হবে?
[ নাম নেই নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায়, অসমে রাতারাতি উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ মানুষ ]
কোনও কোনও মহলের ধারণা, এই লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিণতি অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতোই হবে৷ দীর্ঘদিন এঁরা ভারতে বসবাস করছেন৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে কয়েক পুরুষ ধরেও বসবাস চলছে৷ রাতারাতি উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁদের আর কোনও ঘর থাকছে না৷ এখন যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তাঁদের সে দেশে ফেরানোর প্রস্তাব দিতে পারে ভারত সরকার৷ কিন্তু খুব প্রত্যাশিতভাবেই বাংলাদেশ তা মানবে না৷ কারণ এমনিতেই রোহিঙ্গা সমস্যায় সে দেশ জর্জর৷ তার উপর এই লক্ষ লক্ষ মানুষের চাপ নিতে রাজি হবে না হাসিনা সরকার৷ ফলে এই মানুষগুলির দায় নেবে না কোনও দেশেই৷ এঁরা কোনও জায়গারই নাগরিক হবেন না৷ কারণ কেড়ে নেওয়া হবে ভোটাধিকার৷ ফলে কয়েক লক্ষ মানুষের পরিণতি রোহিঙ্গাদের মতোই হয়ে উঠবে৷
উদ্বাস্তু শিবির করে যদি কয়েক লক্ষ মানুষকে রাখা হয়, তবে সরকারকে বিপুল খরচ বহন করতে হবে৷ দেশের বৈধ নাগরিকত্ব না দিয়েও তাদের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে সরকারকেই৷ তার উপর এই ঘটনার ফলে যে জাতিহিংসার প্রবণতা শুরু হবে তা ভারতের কাছে নতুন মাথাব্যথার কারণ হবে৷
[ অসমে কারও বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নয়, আশ্বাস রাজনাথের ]
এই লক্ষ লক্ষ মানুষদের সম্পত্তি আছে অসমে৷ এখন তাঁরা বৈধ নাগরিক না হলে, এই সম্পত্তির মালিকানা কার হাতে যাবে সেটাও একটি প্রশ্ন৷ সরকার তা অধিগ্রহণ করতে পারে৷ তবে তারও আগে প্রতিবেশীদের হিংসায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ সেক্ষেত্রে ব্যাপক খুনোখুনি ও অশান্ত পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে৷ যদি অসম ছেড়ে এই বাঙালিরা বাংলার দিকে চলে আসতে চান, তবে চাপ পড়বে প্রতিবেশী রাজ্যের উপরেও৷ রাজ্যের সীমান্তে পালটা অনুপ্রবেশ সমস্যা বেড়ে যাবে৷
সব মিলিয়ে ৪০ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব হারানো শুধু তাঁদেরই ছিন্নমূল করে তুলল না৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যকেও এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.