ছবি প্রতীকী
মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: একসময় রাজ্যকে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করেছিলেন। স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্য কারাবাস হয়েছিলও। অসমের বিধানসভার প্রথম ডেপুটি স্পিকারের পরিবারও এবার ‘এনআরসি বিপর্যয়ের’ শিকার। চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ল মৌলভি মহম্মদ আমিরুদ্দিনের পরিবারের ৭০ জনের নাম। নিজভূমে পরবাসী হয়ে গেলেন তাঁরা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিজনদের মতোই হালত হল তাঁদের। বিদেশি তকমা গায়ে সেঁটে যাওয়ায় আতঙ্কে কাটাচ্ছেন আমিরুদ্দিনের স্বজনরা।
প্রসঙ্গত, দেশভাগের সময় অসমের একটা বড় অংশকে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। তখন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা পরবর্তীকালে অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলুইয়ের সঙ্গে মিলে সেই ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেন মৌলভী আমিরুদ্দিন। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বহুবার কারাবাস হয় তাঁর। পরাধীন ভারতে অসম বিধানসভার প্রথম ডেপুটি স্পিকার ছিলেন তিনি। অথচ তাঁরই পরিবারের এতগুলো মানুষের নাম এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই। অসমের মরিগাঁও জেলার কালিকাজারি এলাকায় কয়েক পুরুষ ধরে বাস আমিরুদ্দিনের পরিবারের। তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় রাতারাতি নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেললেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম বাদ যাওয়ার অন্যতম কারণ হল, আমিরুদ্দিনের পরিজনদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হওয়া মামলা। তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে অনেক আগে আদালতে একটি ভুয়ো মামলা দায়ের হয় বলে অভিযোগ। তার জেরেই সম্ভবত নাম বাদ গিয়েছে এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা থেকে, এমনটাই মত আমিরুদ্দিনের পরিবারের। তাঁর ভাইপো হবিকুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের জন্য এ এক চূড়ান্ত হতাশার দিন। পূর্বপুরুষরা দেশকে স্বাধীন করতে প্রাণপাত করেছেন। আর তাঁদেরই পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে আমাদের আজ স্বাধীন দেশে নাগরিকত্ব প্রমাণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে!’
অসম শুধু রাজ্য নয়, একটা জীবিত সত্ত্বা। বহু যুগ ধরে এ রাজ্যে সব ধর্মের মানুষের বাস। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা অসমে আজ ১৯ লক্ষ মানুষের নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাওয়ার বেদনা। যাঁদের সঙ্গে এতদিন ধরে ওঠাবসা, আজ তাঁরাই বিদেশির নজরে দেখছেন প্রতিবেশীদের। এ অসহ্য যন্ত্রণার সমান। বলছেন আমিরুদ্দিনের পরিজনরা। হবিকুলের ভাষায়, নিজের এলাকায় তাঁর পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হল। ধীরে ধীরে এনআরসি বিপর্যয়ের শিকার বেড়েই চলেছে অসমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.