মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: দুই পুরুষের বাস। ব্রহ্মপুত্রের তীরে কতই না জোয়ার-ভাটার সাক্ষী। এই মাটিকেই আপন বলে এতদিন জেনেছেন। কিন্তু মাত্র একটা ঘোষণায় সবকিছু পালটে গেল। জীবন যেন খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে সঞ্জয় দে-র। বাঙালি হলেও এতদিন নিজেকে অসমের বলেই মেনেছেন। কিন্তু জাতীয় নাগরিকপঞ্জি একটি খসড়াতে পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে অসমের ব্যবসায়ীর। আচমকা জানতে পেরেছেন। এ মাটিতে তাঁর আর কোনও অধিকার নেই। তিনি নাকি এখানকার বাসিন্দাই নন। অথচ একই তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর পরিবারের বাকি সকলের। ব্রাত্য কেবল চল্লিশোর্ধ্ব সঞ্জয় দে ও তাঁর এক ভাই। এক লহমায় গোটা দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। এতদিন বাঙালি হওয়ার জন্য কথা শুনেছেন, এবার নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। বিভ্রান্ত বাসিন্দার মুখে কেবল একটাই প্রশ্ন, ‘এমনিতেই ভাষার জন্য কথা শুনেছি, আর কত শুনব?’
[ছিল ভূমিপুত্র হল বাংলাদেশি, এনআরসি কেবল ভুলে ভরা!]
এতকিছু হয়ে গেল জীবনে। তাও নিজের ছবি প্রকাশে অনিচ্ছুক গুয়াহাটির ব্যবসায়ী। কিন্তু কেন? প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না। দুই পুরুষের ভিটেতে এতদিন ধরে আছি। অথচ এখন নাকি আমি এখানকার নই। কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, কোনও ধারণা নেই। ছবি প্রকাশ করলে যদি আরও বিপদে পড়তে হয়?’ পরিবারে স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ছাড়াও বৃদ্ধা মা ও দুই ভাই রয়েছে সঞ্জয়বাবুর। যে তালিকায় বাকি সবার নাম রয়েছে তাঁর ও তাঁর ভাইটির নাম কেন নেই? সে প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। হঠাৎ করে পাওয়া ‘বিদেশি’ তকমা থেকে কীভাবে নিজেকে ও ভাইকে উদ্ধার করবেন, জানেন না সঞ্জয়বাবু। জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর তিনদিন কেটে গিয়েছে। এখনও দিশেহারা তিনি। কথা বলতে গিয়েই চোখেমুখে ফুটে উঠছিল আতঙ্ক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিডিওতে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বারবার ভাবছিলেন, যদি এর জন্য আবার বিপদে পড়তে হয়। বহু কষ্টে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। জানা গেল, এ কেবল একা সঞ্জয় দে’র ঘটনা নয়। জালুকবাড়ি, উদালবাখরা, লালগণেশের মতো বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার একাধিক বাড়ির ঘটনা। এমনিতে অসমের রাজধানী শান্ত। কিন্তু ভিতরে জমছে অশান্তির কালো মেঘ। আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দারা। কার নাম রয়েছে, কার নাম নেই- তাই-ই এখন চায়ের আড্ডায়, অফিস-কলেজ-আদালতের বাইরে আলোচ্য বিষয়। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। যদি বিপদ আরও বাড়ে!
[খসড়া তালিকায় বিজেপি বিধায়কের ‘পুরুষ’ স্ত্রী! বিতর্কের চূড়ায় নাগরিকপঞ্জি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.