মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: শেষপর্যন্ত বিদেশিই হয়ে গেলেন কারগিল যোদ্ধা মহম্মদ সানাউল্লাহ। মামলা-মোকদ্দমা লড়ে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পেয়েও রেহাই মিলল না। অসমে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ রেজিস্টারের (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। সেই তালিকায় জ্বলজ্বল করছে তাঁর নামও। এবার নাগরিকত্ব ফিরে পেতে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে যাওয়া ছাড়া আরও কোনও রাস্তা নেই কারগিল যুদ্ধের সেনানীর। তাঁর মতো বাদ পড়েছে হাইলাকান্দির বাসিন্দা সেনার অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্তা বিমল চৌধুরির নামও। কারগিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করেছিলেন তিনি৷ অথচ বিজেপি শাসিত অসমে সেই প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট মহম্মদ সানাউল্লাহকে ‘বিদেশি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হল৷
১৯৬৭ সালে মহম্মদ সানাউল্লাহর জন্ম। তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পরে ২০১৭ সালে অবসর নেন৷ এরপর এএসআই হিসেবে সীমান্ত শাখায় যোগ দেন। তার সব তথ্যপ্রমাণই জমা দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীতেও পুলিশে যোগ দেওয়ার সময়ে তাঁর নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়। তবে বিচারক জানান, শুনানির সময় সানাউল্লাহ ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের কথা বলেছিলেন৷ তাই ভুল তথ্য দেওয়ার অপরাধেই তাঁকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যমনস্কতায় সানাউল্লাহ ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছেন বলেই দাবি করেন অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আজমল হক৷ তাঁর অভিযোগ, আদালত জোর করে দেশের জন্য কাজ করা এক প্রাক্তন সেনাকর্মী ও রাজ্য পুলিশের এএসআইকে ‘বিদেশি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে৷ তারপর তাঁকে গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সানাউল্লাহর পরিজনেরা৷ তখন আদালতের নির্দেশে জামিন পান তিনি।
শনিবার এনআরসি চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নামের সঙ্গে বাদ পড়ে তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলের। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তালিকায় ঠাঁই হয়েছে তাঁর স্ত্রীর। এতেই এনআরসি নিয়ে জনমানসে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রসঙ্গত, সাধারণ মানুষ তো বটেই, উল্লেখযোগ্যভাবে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অসমের অন্যতম বিরোধী দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (এআইডিইউএফ) বিধায়ক অনন্ত কুমার মালো। ওয়েবসাইটে নিজের নাম খুঁজে পাননি তিনি। বাদ পড়েছে কাটিগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাজারভুঁইয়ার নামও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.