সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মায়ের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১১ দিনের মুক্তি। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পেলেন ‘বিদেশি’র তকমা পাওয়া হিন্দিভাষী দম্পতি। দীনেশ প্রজাপতি (৪১) ও তারাদেবী (৩৮)। চলতি মাসের ১৬ তারিখে বয়সজনিত কারণে দীনেশবাবুর মা ছোটকিদেবীর মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই প্রজাপতি দম্পতিকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। অসম হাইকোর্টে আবেদনও করা হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ১১দিনের ছুটিতে তিনসুকিয়া জেলার পাখোরিজান গাঁওয়ের বাড়িতে ফিরছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, প্রজাপতি দম্পতি চলতি বছরের ১৫ মে থেকে পৃথক ডিটেনশন ক্যাম্পে রয়েছেন। ওই দিন থেকেই বদলেছে স্বামী-স্ত্রীর বাসস্থান। দীনেশকে যেতে হয়েছে ডিব্রুগড়ের ডিটেনশন ক্যাম্পে। আর তারাদেবীকে জোরহাটে। পেশায় কৃষিজীবী দীনেশের সংসারে অভাব থাকলেও আনন্দের ঘাটতি ছিল না। পাখোরিজানের বাড়িতে স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল দীনেশের। সেই সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ২০০২ সালের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিস। রাজ্যপুলিশের সীমান্ত শাখার তরফে সেই নোটিস পৌঁছেছিল প্রজাপতিদের পরিবারে। পড়াশোনা না জানা পরিবারটি নোটিসের মাথামুণ্ডু বুঝতে পারেনি। এর পরের বছরই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মেনে ওই দম্পতিকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আদতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা দীনেশ এসবের কিছুই জানতেন না। তাই ‘বিদেশি’ তকমা পেয়েও আদালতের দ্বারস্থ হননি। সরকারি নির্দেশিকা মাফিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনও করাননি। তার ফলস্বরূপ চলতি বছরের ১৫-মে তাঁদের ঠাঁই হল ডিটেনশন ক্যাম্পে। তখন থেকে ডিটেনশন ক্যাম্পই তাঁদের ঘরবাড়ি। পৃথক জায়গায় থাকার কারণে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেল। বাবা-মাকে ছাড়া বৃদ্ধা ঠাকুমার তত্ত্বাবধানে প্রায় অনাথের মতো বড় হতে লাগল পাঁচ সন্তান। সংসারের অভাব অনটনের মুখে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে স্কুল ছাড়তে হল বড়ছেলে ধীরজকে। এখন একটা ভাল কাজের খোঁজে রয়েছে ওই নাবালক। যাতে সংসারের হাল ধরতে পারে। এরমধ্যেই ঠাকুমার মৃত্যুতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অসম ভোজপুরি পরিষদের সহায়তায় বাবা-মায়ের মুক্তির জন্য হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ১১ দিনের জন্য বাড়ি ফিরছেন ওই দম্পতি। তবে ১০ সেপ্টেম্বর পুনরায় তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে ফিরতে হবে। সেজন্য রাজ্যপুলিশের সীমান্ত শাখার কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গোটা ঘটনায় দৃশ্যতই বিরক্ত অসমের ভোজপুরি পরিষদ। সংস্থার তরফে প্রেসিডেন্ট কৈলাস গুপ্তা প্রশ্নও তুলেছেন। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা হয়ে কী করে ‘বিদেশি’র তকমা জুটল প্রজাপতি দম্পতির কপালে? জানতে চেয়েছেন তিনি। দীনেশবাবুর বাবা পরশুরাম একজন দিনমজুর ছিলেন। কাজের সন্ধানেই ১৯৭০ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে অসমে চলে আসেন। এর আগেই ১৯৬৮-র ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নথিভুক্ত হয়েছে। ১৯৬৬-তে ভোটার লিস্টে নাম উঠেছে তারাদেবীর বাবার। প্রজাপতিরা যে বংশপরম্পরায় উত্তরপ্রদেশের বালিয়াতে থাকতেন তারও নথিও রয়েছে পরিবারটির কাছে। তারপরেও কী করে একটি পরিবারকে ‘বিদেশি’র তকমা পেতে হবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.