মণিশংকর চৌধুরি, শিলং: পুনর্মিলন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই তো মাসদুয়েক আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইস্যুতে বিজেপির বাপ-বাপান্ত উদ্ধার করে দিচ্ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থানীয় দলগুলি। ১১টি ছোট দলের জোটের নেতৃত্বে ছিলেন খোদ মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি নেতা কনরাড সাংমা। কিন্তু, লোকসভা ভোটের দামামা বাজতেই সুর বদলে ফেললেন প্রাক্তন স্পিকার পি এ সাংমার ছেলে এবং তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি। কনরাড সাংমা জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটের পরে প্রয়োজনে বিজেপির পাশেই আছে তাঁর দল।
কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বিবাদের জেরে উত্তরপূর্বে এনপিপি তৈরি করেছিলেন প্রাক্তন স্পিকার পিএ সাংমা। তাঁর মৃত্যুর পর দলের দয়িত্বে ছেলে কনরাড সাংমা। মেয়ে আগাথা সাংমাও মেঘালয়ের তুরা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। কনরাড এখন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দল কলেবরে অনেকটাই বেড়েছে গত কয়েক বছরে। মেঘালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে দল এখন মণিপুর, অরুণাচলেও প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। বলতে গেলে উত্তর-পূর্বের স্থানীয় দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টিই।
উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপি তথা এনডিএর ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে এনপিপির উপর। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ করে সাংমা যখন এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন, বিজেপি নেতাদের অনেকেই মাথায় হাত উঠে গিয়েছিল। এনডিএ জোট উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রভাবশালী হলেও, এককভাবে বিজেপি ততটা শক্তিশালী নয়। তাছাড়া মণিপুরে সরকার টিকিয়ে রাখতে হলেও এনপিপির সমর্থন প্রয়োজন। আশু সংকটের কথা আন্দাজ করতে পেরে দ্রুত আসরে নামেন বিজেপি নেতারা। এবং তারা আশানুরূপ ফলও পেলেন। ভোটের বাদ্যি বাজতেই ভাল খবর এল গেরুয়া শিবিরের জন্য।
কনরাড সাংমা জানিয়ে দিলেন, আসন্ন লোকসভা ভোটের পর যদি প্রয়োজন পড়ে ফের বিজেপিকে সমর্থন করবেন তিনি। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মেঘালয়ের স্বার্থে বিজেপিকে সমর্থন করবে এনপিপি।” বিরোধী কংগ্রেসকেও এদিন তুলোধনা করেন সাংমা। তিনি বলেন, “প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এখানে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বিজেপির তথা এনপিপির বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে। আগের সরকারের আমলে কোনও উন্নয়ন হয়নি, সেকারণেই বিজেপিকে সমর্থন করতে হচ্ছে আমাদের।” প্রশ্ন হল, বিজেপি যদি আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি লোকসভায় পেশ করে? মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তাহলে আমরা আবারও বিরোধিতায় যাব। সেক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে কোনও সমঝোতা হবে না।”
এ তো গেল জোট রাজনীতির কথা। শিলংয়ের অলিগলিতেও কিন্তু বিজেপির পক্ষে একটা চোরাস্রোত কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা এখানে চূড়ান্ত। মেঘালয়ের দুটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তুরা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী রিকমান মোমিন। অন্যদিকে, শিলং কেন্দ্রে প্রার্থী সোনবর শুলাই। কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে দুটি আসনেই। তুরা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা অন্যদিকে, শিলং থেকে প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ ভিনসেন্ট এইচ পালা। এনপিপি অবশ্য একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তুরা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন অগথা সাংমা। শিলং কেন্দ্রটি জোটসঙ্গী ইউডিপিকে ছেড়ে দিয়েছেন কনরাড।
আসলে, শিলং কেন্দ্রে মূল লড়াই বিজেপি বনাম কংগ্রেসের, তাই ভোট কাটাকাটিতে কংগ্রেস যাতে সুবিধা না পেয়ে যায় তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে, টুরা কেন্দ্রটিতে লড়াই কংগ্রেস বনাম এনপিপির। এখানে বিজেপির প্রার্থী আবার ততটা শক্তিশালী নয়। সব মিলিয়ে একটা অলিখিত সমঝোতা চলছে এনপিপি আর বিজেপির। তাছাড়া, এনপিপি জানিয়ে দিয়েছে, অরুণাচলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর যদি ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরকেই সমর্থন করবে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.