সন্দীপ চক্রবর্তী, ত্রিপুরা: দু’বছর বাদে ত্রিপুরার বিধানসভার লড়াইয়ে (Tripura Assembly Election) এখনই কোমর বেঁধে নামছে তৃণমূল (TMC)। উঠছে স্লোগান, ত্রিপুরাতেও খেলা হবে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিপুল জয়, উন্নয়ন প্রকল্পের জেরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এখন থেকেই জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। দিদিকে চাইছেন সেই নেতারা। ‘খেলা হবে’ গানের জোরে অদ্ভুতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্যও।
দু’বছর পর ত্রিপুরার বিধানসভা ভোট। বাংলায় নির্বাচনের প্রভাব বরাবরই পড়ে থাকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালি অধ্যুষিত এই রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কী ফল হয়, সেদিকে নজর ছিল সেখানকার বাঙালির। বাংলার ভোটে যেভাবে ‘বহিরাগত’ বা অতি হিন্দুত্ব ইস্যু তুলে ধরা হয়েছিল, সে ব্যাপারে বঙ্গের বাসিন্দারা কী রায় দেন, প্রতীক্ষা ছিল তার। তৃণমূল ২১৩ আসন জেতার পরই বদলাচ্ছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক ছবিও। ত্রিপুরা তৃণমূলের দাবি, গত ৪ মে থেকে দশদিনে বিজেপি ছেড়ে দুই হাজার ১২৩ জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বহু নেতাও যোগাযোগ রাখছেন। তবে তিন-চার বছরের আগের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য দল থেকে নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ছাঁকনি’ ব্যবহার করতে চাইছেন প্রদেশ নেতারা।
তৃণমূলের ত্রিপুরা রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিংয়ের বক্তব্য, “নিচুতলার কর্মী যাঁরা কঠিন সময়েও রাস্তায় নেমে লড়াই করেছেন, তাঁদের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে সব নেতারা আগেও আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করেছেন, তাঁদের নিতে চাই না। ত্রিপুরার মানুষ বুঝতে পেরেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি ও উন্নয়নের কাণ্ডারি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিশ্রামগঞ্জে রেললাইনের রুট বদলে যেভাবে দশ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন, উপজাতিরা মনে রেখেছেন।” ত্রিপুরায় এখনই ভোট হলে তৃণমূল সরকার গড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। কাঞ্চনপুরে ১২০টি পরিবার, কামালপুরে দশটি পরিবারও যোগ দিয়েছেন গত দু’দিনে। সেই স্রোত বাড়বে বলেই নেতৃত্ব মনে করছে।
রাজ্যে মোট আসন ৬০টি। গতবারের ভোটে বিজেপি জিতেছিল ৩৭টি আসনে, বামেদের জয় ছিল ১৫টিতে। তবে বিপ্লব দেব সরকারে আসার পর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। এর উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিজেপিকে বাংলা থেকে হারিয়েছেন, তার ফলেই ত্রিপুরার মানুষ তৃণমূলের উপর আস্থা রাখতে চাইছে। এমনটাই মত ত্রিপুরা তৃণমূল নেতৃত্বের। আশিসবাবু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীনলাল সিংয়ের পুত্র। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে ত্রিপুরায় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বিধানসভার ভোটে ‘চলো পাল্টাই’ শ্লোগানকে হাতিয়ার ও জনপ্রিয় করে মানিক সরকারের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। বড় দায়িত্ব নিয়েছিলেন রামমাধব, সুনীল দেওধররা। বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ত্রিপুরার যেমন সব খবর বাংলা রাখে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের রাজ্যেরও। বিপ্লব দেবকে বাংলায় প্রচারে এবার দেখাই যায়নি প্রায়। বিজেপির ব্যর্থতা ও বামেদের প্রতি ‘বিতৃষ্ণা’ থেকেই এবার তৃণমূলের হাওয়া বইছে বলে দাবি করলেন মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শিবানী সেনগুপ্তও। তাঁর বক্তব্য, “এখানকার মহিলারা আমাদের নেত্রীর উন্নয়নের প্রকল্প সব জানেন। তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। আমরা দিদিকে চাইছি, উনি আসুন। ২ মে-র পর সবাই বলছে, ত্রিপুরায় খেলা হবে। দেবাংশুও আসুক।” অর্থাৎ গেরুয়া শিবির তিন বছর আগে যে সুরে ‘চলো পাল্টাই’-এর ডাক দিয়েছিল, সেই সুরই বদলে যাচ্ছে, ‘ত্রিপুরাতেও খেলা হবে।’ সৌজন্য, বাংলার নির্বাচন। আর এই স্লোগান আর মমতার জয়কে সামনে রেখেই দু’বছর বাদের লড়াইয়ে নেমে পড়ল ত্রিপুরার তৃণমূলও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.