সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এমনিতেই তিনি ‘মোদি-বিরোধী’ হিসেবে পরিচিত। এর আগে একাধিক বিষয়ে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের বিরোধিতা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেও তাঁর সেই বিরোধিতা জারি রইল। সোমবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট এর বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে গণতান্ত্রিক আদর্শ অর্জনের জন্য এত কিছু করেছে ভারত। তবে এখন আর আমি একজন ভারতীয় হিসাবে এই সত্য নিয়ে গর্বিত নই যে, ভারতই গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম প্রাচ্যের দেশ ছিল। কেননা, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা সেই খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছি।’
তাঁর আরও মন্তব্য, ‘গণতন্ত্র ছাড়া কোনওভাবেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আর যে পথ নেওয়া হল, তা সমস্ত মানুষের অধিকার বজায় রাখার পরিপন্থী।’ এর আগে ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে বিভিন্ন বিশিষ্টরা নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। সমর্থন-বিরোধিতা, মিশ্র প্রতিক্রিয়াই ছিল তাতে। এই প্রথম কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলে অমর্ত্য সেন তার বিরোধিতাই করলেন। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের একাধিক ফাঁকফোকর চিহ্নিত করেছেন তিনি। ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় সেখানে এখন থেকে জমি কিনতে পারবেন দেশের যে কোনও প্রান্তের বাসিন্দাই, এনিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষই এক্ষেত্রে ঠিক করবেন, তাঁরা কাকে জমি বিক্রি করবেন। কারণ, এই জমির অধিকার সম্পূর্ণভাবে তাঁদেরই। তাই তাঁদেরই ঠিক করতে দেওয়া উচিত ছিল যে তাঁরা কী চান। এই একই সুর শোনা গিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।
৩৭০ ধারা বিলোপের আগে জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করা। তবে সেই তালিকায় প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে ফেলা হয়েছিল। প্রথমে তঁদের গৃহবন্দি, পরে গ্রেপ্তার করা হয়। আপাতত তাঁরা দুজনেই নজরবন্দি। এ প্রসঙ্গে অর্মত্য সেনের বক্তব্য, এটা মোটেই কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। যুক্তি হিসেবে তিনি অতীতের কথা তুলে আনেন। বলেন, ‘ইতিহাসে আছে, রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে আন্দোলন দমন করা যায় না।আগেও তাঁরা লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন।’ এসব উল্লেখ করে তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক
ফলও ভুগতে হতে পারে। উপত্যকায় এনিয়ে পালটা বিদ্রোহ শুরু হলে,প্রাণহানির মতো ঘটনার জন্য যেন প্রস্তুত থাকে কেন্দ্রে, সেই সতর্কবার্তাও দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
তবে এই বিরোধিতার চেয়েও বাঙালি নোবেলজয়ী ভারতীয় হিসেবে যে গর্ববোধ করেন না, সেই মন্তব্যটিই এই মুহূর্তে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। গেরুয়া শিবিরের একাংশ আগাগোড়াই অমর্ত্য সেনের কাজ ভারতের প্রেক্ষাপটে যথোপযুক্ত নয়, তা মনে করে। অনেকেই তাঁকে তেমন বিশিষ্ট ভারতীয় বলে মনে করেন না। এখন বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদের এই মন্তব্য তাঁদের সেই ভাবনাকেই আরও শক্তপোক্ত করল, তা বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.