সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাত ন’টার পরে বর-কনের বিয়ে দিতে পারবেন না কাজি। মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে এমনই নির্দেশিকা জারি করল তেলেঙ্গানা সরকারের ওয়াকফ বোর্ড। সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করলে সেই কাজির বিরুদ্ধে নোটিস পাঠাবে ওয়াকফ বোর্ড। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বিয়ের বুকলেটে ওই কাজির নাম থাকবে না। এমনকী, বিয়ের শংসাপত্র থেকেও বাদ যাবে কাজির নাম। রাত ন’টায় বিয়ে শুরু হলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তা মিটে যাবে। তারপর খাওয়াদাওয়া-সহ অতিথি অভ্যাগতদের আপ্যায়ন চলতে পারে মধ্যরাত পর্যন্ত। হায়দরাবাদের বিশিষ্ট ইসলামি শিক্ষাবিদ, পুলিশ প্রশাসনের বড়কর্তাদের নিয়ে হজ হাউসে বৈঠকে বসে ওয়াকফ বোর্ড। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওয়াকফ বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, বিয়েবাড়িতে গানবাজনা, সঙ্গীত, বাজি পুড়িয়ে প্রচুর অর্থের অপচয় করা হয়। অন্তত দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই খরচের বহরে রাশ টানা উচিত। আমন্ত্রিতরা সবাই আগে তো আসেন না। দিনের দিন এসে অনেকে ফিরে যান। বিয়ের সময় দেরিতে থাকলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছতে সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া বিয়ে সম্পন্ন না হলে আমন্ত্রিতরা খেতে যেতেও পারেন না। এটা অপমানজনক বৈকি। তাছাড়া বিয়েবাড়িতে ভোর তিনটে পর্যন্ত হইহুল্লোড় চললে অসুবিধায় পড়েন আশপাশের বাসিন্দারা। বিয়ের সময় ঠিক করতে গিয়ে এসবদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আয়োজকরা পড়শিদের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রাখে না। তাই রাত ন’টায় বিয়ে বাড়ির সময় বেঁধে দিলে অন্যান্য অনুষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারবে না।
ওয়াকফ বোর্ডের নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আঞ্জুমান-ই-কাজাত এর প্রধান কাজি মীর মহম্মদ খাদের আলি। তিনি বলেন, বিয়ের বিষয়ে কাজিদের বিরুদ্ধে কোনওরকম পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের নেই। তবুও বিয়ের অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছি। ওয়াকফ বোর্ডের এহেন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হায়দরাবাদের সমাজকর্মীরা। বিয়েবাড়ির রাজকীয় খরচে রাশ টানতে সরকার অতিথি নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা জারি করুক। বিয়েবাড়িতে অর্থের অপচয়ের সঙ্গে প্রচুর খাবারও নষ্ট হয়। সেসব বন্ধ করে অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ টাকার কিছুটা দরিদ্রদের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হোক। এমনটাই দাবি সমাজকর্মীদের।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেছে সমাজকর্মীদের একাংশ। বিরোধীদের দাবি, বিয়েবাড়িতে অনেকেই দূর থেকে আসে। ন’টায় বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল সব শেষ। তখন গৃহকর্তা ও আমন্ত্রিত দুই তরফের কাছেই বিষয়টি বিড়ম্বনার হবে। ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। সমাজের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। তাই বিয়েতে নাক গলানোর অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের নেই। বোর্ড সদস্যরা বরং ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষায় নজর দিক। এমনটাই দাবি বাসিন্দাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.