সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করেছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা। কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজে না পেয়ে সরকারের ১০৮ নম্বর হেল্পলাইনে ফোন করেছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু, সেখান থেকেও আসেনি কোনও উত্তর। বাধ্য হয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাইকে করেই তাঁকে নিয়ে গেলেন পরিবারের সদস্যরা। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার চান্দোয়া ব্লকের চাটুয়াগ গ্রামে। মজার কথা হল, স্থানীয় সাংসদ মডেল গ্রাম তৈরির জন্য যে তিনটি এলাকাকে বেছে নিয়েছেন এই গ্রামটি তার মধ্যেই আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ৩০ বছরের যুবতী শান্তিদেবীর প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু, সরকারি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাননি। ১০৮ নম্বরে ফোন করলেও কোনও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাইকে বসিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চান্দোয়া কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে যান পরিবারের দুই সদস্য। কিন্তু, সেখান থেকেও তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় লাতেহার সদর হাসপাতালে। কিন্তু, সেখানেও চিকিৎসা হয়নি শান্তিদেবীর। বরং সেখানকার চিকিৎসকরাও তাঁকে রেফার করে দেন ২৭ কিলোমিটার দূরে থাকা রাঁচির রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (আরআইএমএস)-এ। তিন জায়গায় ঘুরে শেষপর্যন্ত এখানেই ঠাঁই হয় তাঁর।
এপ্রসঙ্গে শান্তিদেবীর স্বামী কামাল গাঞ্জু বলেন, “চান্দোয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জন্য অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজেও পাইনি। ১০৮ নম্বরে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে বাধ্য হয়ে বাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
স্থানীয় সিপিএম নেতা আয়ুব খান বলেন, “প্রথমে উনি অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও পাননি। পরে লাতেহারের ডেপুটি কমিশনারের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও সদর হাসপাতালে রক্ত দিতেও অস্বীকার করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসায় অযথা দেরি করে তাঁর জীবন নিয়ে খেলা করছিলেন তাঁরা। এই ঘটনা সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার পক্ষে লজ্জাজনক।” লাতেহারের সিভিল সার্জেন ডাঃ এসপি শর্মা বলেন, “চান্দোয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১০৮ নম্বর হেল্পলাইনের জন্য দুটি অ্যাম্বুল্যান্স আছে। পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও রয়েছে একটি মমতা বাহন। তারপরও ওই প্রসূতি কেন অ্যাম্বুল্যান্স পেলেন না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই ঝাড়খণ্ডের সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে বিরোধীরা। কেউ কেউ যেমন অ্যাম্বুল্যান্স কেন দেওয়া হল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তেমনি কেউ কেউ বলছেন, যেভাবে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভাল চিকিৎসার নামে অন্য হাসপাতালে রেফার করছেন তা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। এর ফলে চিকিৎসা পাওয়ার আগেই প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.