ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: দীর্ঘ বিতর্কের অবসান। ডাক্তারি পড়ুয়াদের ‘হিপোক্রেটিক ওথ’-এর বদলে নিয়ে হবে চরকের নামে শপথই। শুক্রবার নির্দেশিকা জারি করে তা জানিয়ে দিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল (NMC)। এই ‘চরক শপথ’ নিয়ে দেশের প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে মেডিক্যাল সিলেবাসেও খানিকটা বদল হয়েছে। এবার থেকে ফাউন্ডেশন কোর্সে যোগব্যয়াম বাধ্যতামূলক। সম্ভবত ২০২২ সালের পাঠক্রম থেকেই চরকের নামে শপথ নিতে হবে MBBS পড়ুয়াদের।
চিকিৎসা (Medical Sector)পেশায় আসার আগে গোটা বিশ্বেই শপথ নেওয়ার প্রচলন রয়েছে। মূলত গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের নামাঙ্কিত শপথই পাঠ করা হয়। সেটাই ‘হিপোক্রেটিক ওথ’ বা শপথ নামে পরিচিত। অপরদিকে প্রাচীন ভারতের চিকিৎসার ‘জনক’ বলে পরিচিত মহর্ষি চরক (Charak)। তাই মোদি সরকারের প্রস্তাব ছিল, হিপোক্রেটাস নন, চরকের নামে শপথ নিয়েই চিকিৎসকরা জনসেবার কাজ শুরু করুন। যদিও কেন্দ্রের এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি চিকিৎসক মহলের একাংশ। তাঁরা এই প্রচেষ্টাকে স্বাস্থ্যশিক্ষায় ‘গৈরিকীকরণে’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
‘হিপোক্রেটিক ওথ’ নাকি ‘চরক শপথ’ এই বিতর্ক চলাকালীন ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta Medical College) এমবিবিএস ক্লাসের শুরুর দিনই প্রথম বর্ষের হবু চিকিৎসকদের পাঠ করানো হয় ‘চরক’ শপথ। তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে ওঠে। পড়ুয়াদের একাংশের আপত্তি ছিল এতে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রস্তাব মেনেই চরকের নামে শপথ পাঠ করানো হয়েছে।
তবে শুক্রবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে কেন্দ্রের ‘চরক শপথে’কেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। দেশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে বলে খবর। বদল এসেছে সিলেবাসেও। ফাউন্ডেশন কোর্সে যুক্ত হয়েছে যোগব্যয়াম। ১২ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত দশদিন পঠনপাঠন শুরুর আগে একঘণ্টা করে যোগব্যয়াম করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়। প্রতিটি মেডিক্যাল পড়ুয়াকে অন্তত একটি পরিবারের জীবনযাপনের যাবতীয় তথ্য চারবছর ধরে ক্লিনিক্যাল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তার মধ্যে থাকবে হিমোগ্লোবিন, ব্লাড প্রেশার,সুগার, ম্যালেরিয়া বা পরজীবী রোগ সংক্রান্ত তথ্য।
চিকিৎসক-সাংসদ ডাক্তার শান্তনু সেনের কথায়, “দেশের সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ। এর ফলে মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থার গরিমা হারাবে।” মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র জানিয়েছেন, “ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন যে নোটিস জারি করেছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে চড়ক শপথ পাঠ করানো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক।” রাজ্যের চিকিৎসকদের সিংহভাগের অভিমত, আগে তো ইন্টার্নশিপ করার সময় শপথ নেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন বলা হচ্ছে শুরুতেই। সেই পড়ুয়া আগামী দিনে ডাক্তার হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.