নীলাঞ্জন দে: আর্থিক সম্পদের উপর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman) বাজেটে যেভাবে কর চাপিয়েছেন, তাতে হয়তো তাঁকে সমালোচিত হতে হবে। মূলধনী লাভের উপর স্বল্পমেয়াদে তথা শর্টটার্ম এবং দীর্ঘমেয়াদে তথা লংটার্ম, দু’ক্ষেত্রেই যেভাবে ক্যাপিট্যাল গেইনস ট্যাক্স তিনি বৃদ্ধি করেছেন তা সাধারণ বা ছোট লগ্নিকারীদের অনুকূলে থাকবে না। যদিও তাঁর আয়করের হারের পরিবর্তন বেতনভুক মানুষকে খুশি করবে। ফ্যামিলি পেনশনের ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হওয়ায় পেনশনভোগীরাও কিছুটা খুশি হবেন।
দীর্ঘমেয়াদী লাভ তথা লংটার্ম ক্যাপিটাল গেইনসের ক্ষেত্রে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিছু আর্থিক সম্পদের ক্ষেত্রে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স ২০ শতাংশ করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী লাভের ক্ষেত্রে এখন লাভের উপর ১ লক্ষ টাকা ছাড় রয়েছে। সেটা বাড়িয়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আয়করে নতুন রেজিমে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফ্যামিলি পেনশনের ক্ষেত্রে ডিডাকশন ১৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে কোন ধরনের আর্থিক সম্পদের ক্ষেত্রে বর্ধিত শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে তা বাজেট থেকে খুব স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। এটার জন্য আরও কিছুদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। লংটার্ম ক্যাপিটাল গেইনসের ক্ষেত্রে ‘লিস্টেড অ্যাসেট’ যদি কেউ ১২ মাসের উপর ধরে রাখেন, তাহলে ২০ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে। তবে হোল্ডিং পিরিয়ড অর্থাৎ আর্থিক সম্পদটা আপনি কতদিন ধরে রাখবেন তার উপর করের হার নির্ভর করবে।
ঘটনাচক্রে আমাদের দেশে বহুসংখ্যক লগ্নিকারী শুধু স্বল্প সময়ের জন্য সিকিউরিটিজ ধরে রাখে, অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে এই হোল্ডিং পিরিয়ড গড়পড়তা হিসেবে খুবই কম। ইদানীংকালের ট্রেডিংয়ের পরিসংখ্যান দেখে এটাই বোঝা যাচ্ছে। আগামী দিনেও এই ধারাটি বজায় থাকবে বলে আমার ধারণা। আজকের বাজেটে লংটার্ম এবং শর্টটার্মের তফাত করের নিরিখে স্পষ্ট।
এরসঙ্গে উল্লেখ করতে হবে ফিউচারস অ্যান্ড অপশনসের ক্ষেত্রে সামান্য হলেও করের হারের পরিবর্তনের কথা। এরজন্য সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশন ট্যাক্স (যা লোকের মুখে এসটিটি নামে চলে আসছে) ০.০২ শতাংশ হারে দিতে হবে। বাজেটের আগে এই হার ছিল ০.০১ শতাংশ। ফিউচার্স অপশনস, ভারতের বাজারে এইমুহূর্তে বেশ প্রয়োজনী হিসাবে গণ্য। তার কারণ অনেক নতুন লগ্নিকারী এই বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। ঝুঁকি সত্ত্বেও এগিয়ে আসছে।
বাজেটের কারণে মঙ্গলবার প্রায় সারাক্ষণই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা ছিল। ‘প্রধান গেইনার’গুলির মধ্যে ছিল, টাইটান, আইটিসি, টাটা কনজিউমার, এনটিপিসি এবং আদানি পোর্টস। ‘লুজার’দের তালিকায় ছিল লার্সেন টুব্রো, হিন্দালকো, শ্রীরাম ফিনান্স, বাজার ফিনান্স এবং ওএনজিসি। খুব সক্রিয়ভাবে দেখা গিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাস ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে। এই তথ্যটা উঠে এসেছে ট্রেডিং বন্ধ হওয়ার পর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে।
সামগ্রিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, বাজেট একাধিক সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অর্থমন্ত্রী তঁার বয়ানে এনার্জি সেক্টরের উল্লেখ করেছেন। বিনিয়োগকারীরা ইতিমধে্য একগুচ্ছ নিউএনার্জি সংস্থার শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি, বিশেষ করে অটোমোবাইল এবং টেক্সটাইলস সরকারী নীতির জন্য আগামি দিনে প্রসারিত হবে। পরিকাঠামোর উন্নতি সাধনের জন্য বাজেটের বিভিন্ন অংশে বহু উল্লেখ রয়েছে। এগুলির সম্মিলিত প্রভাব বাজারের উপর পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কমোডিটি নির্ভর ব্যবসা এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবারের বাজেটে এবিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য নির্দিষ্ট করে এনিয়ে বলেছে। পরিকাঠামো, এমএসএমই, ইনসলভেন্সি কোর্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ইত্যাদির কথা এক্ষেত্রে বলা চলে। এদিন ক্লোজিংয়ে সূচক ছিল নিফটি ২৪,৪৭৯.০৫ পয়েন্ট (-০.১২%)। নিফটি নেক্সট ফিফটি ৭১,৬৩২.২০ পয়েন্ট (-০.৪৪%) এবং নিফটি মিডক্যাপ ১২,৩৭৫.৬০ পয়েন্ট (-০.৩০%)।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.