সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে তিহার জেলে চলছে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া চারজনের ফাঁসির প্রস্তুতি। অন্যদিকে, তাদেরই একজন মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল। এবং সে জন্য অদ্ভুত যুক্তিও দিয়েছে অক্ষয় সিং ঠাকুর। তার দাবি, দিল্লির দূষণে এমনিতেই মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। তার উপর আর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কী হবে? তাই তার ফাঁসির সাজা রদ করা হোক।
যদিও সূত্রের দাবি, ফাঁসির দড়ি তৈরি হয়ে তিহার জেলে পৌঁছে গিয়েছে। হয়েছে ‘ডামি’ মহড়াও। শুধু নির্দেশের অপেক্ষা। সবুজ সংকেত মিললেই দোষীদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এক জেল কর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, বক্সার জেল থেকে ১০টি ফাঁসির দড়ি এসে গিয়েছে তিহারে। কিন্তু ফাঁসুড়ে না থাকায় অন্য জেল থেকে ফাঁসুড়ে নিয়ে আসা হবে। ফাঁসির দড়ি তৈরির জন্য বক্সারের এই জেল বহুদিন ধরেই বিখ্যাত। ২০১৬-’১৭ সালে সংসদ হামলায় দোষী আফজল গুরুর ফাঁসির সময় শেষ বার এই জেল থেকে সরবরাহ হয়েছিল ফাঁসির দড়ি। দেশের যে প্রান্তেই ফাঁসির সাজা ঘোষণা হোক না কেন দড়ি যায় বক্সারের এই জেল থেকেই। এবার একসঙ্গে ১০টি ফাঁসির দড়ি তৈরির বায়না পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় জোর জল্পনা। খুব বেশিদিন এই দড়ি সংরক্ষণ করা যায় না। বেশিদিন ফেলে রাখলে দড়ি কমজোরি হয়ে যায়। তাই কোনও সাজা কার্যকর করার ঠিক আগেই নিয়ে আসা হয় এই দড়ি। তাই শীঘ্রই সাজা কার্যকর হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০১২-র ডিসেম্বরে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনে চারজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। প্রত্যেককেই ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত। বাকি তিনজন এর আগে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল। যদিও আগের রায়ই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। অক্ষয় আগে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেনি। কিন্তু মঙ্গলবার সেই পদক্ষেপ করল। এবং তার আবেদনে আইনি যুক্তির পাশাপাশি একটি ‘অদ্ভুত’ ও ‘হাস্যকর’ যুক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। অক্ষয়ের আইনজীবী এ পি সিং সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা রিভিউ পিটিশনে দাবি করেছেন, ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে ছিলই না তাঁর মক্কেল। তাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হয়নি। এর সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দিতে তিনি তৈরি। বিশ্বের বহু দেশে মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়ে গিয়েছে, সেই যুক্তিও পেশ করেছেন আইনজীবী।
আর নানা যুক্তি-তর্কের ফাঁকেই পেশ করা হয়েছে এক অদ্ভুত ব্যাখ্যাও। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘এটা বললে অত্যুক্তি করা হবে না যে, দিল্লি শহর, দিল্লি এনসিআর-এর পরিবেশের অবস্থা শোচনীয়। পুরো গ্যাস চেম্বার হয়ে উঠেছে। জলও বিষের মতো। বায়ু ও জলের দূষণের জেরে এমনিতেই মানুষের আয়ু দ্রুত হারে কমছে। তাহলে আর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে লাভ কী?’ নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় সিংয়ের সঙ্গেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে অক্ষয়। মঙ্গলবার তার আইনজীবী এ পি সিং বলেন, ঘটনার দিন তাঁর মক্কেল বিহারের ঔরঙ্গাবাদে নিজের বাড়িতে ছিল। তার কাছে সে রাতের বাস টিকিট এবং অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে, যা শীর্ষ আদালত চাইলে জমা করা যাবে।
অপর অভিযুক্ত রাম সিং বিচার প্রক্রিয়া চলার সময়েই তিহার জেলে আত্মহত্যা করেছিল। অপর অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল কোর্টে তার বিচার হয়। তিন বছর জেল খেটে সে মুক্তিও পেয়ে গিয়েছে। দোষীরা এখনও শাস্তি না পাওয়ায় ফের নানা প্রান্তে আন্দোলন, প্রতিবাদ দানা বাঁধছে। এই অবস্থায় অক্ষয়-পবনদের দ্রুত ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.