দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত অক্ষয় সিং ঠাকুরের ফাঁসির সাজা বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালে শীর্ষ আদালতের রায় পুর্নবিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল ওই অভিযুক্ত। কিন্তু তার সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি জে বানুমথি। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের রায়ে কোনও ভুল ছিল না। তাই এই রায় পুনর্বিবেচনার মধ্যে কোনও সারবত্তা নেই। বুধবার অভিযুক্ত অক্ষয় সিং ঠাকুরের আইনজীবী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন জানাতে ১৫ দিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সাতদিনের মধ্যে সেই আবেদন জানাতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। এদিন রায়দানের পর নির্ভয়ার মায়ের প্রতিক্রিয়া, সুবিচারের দিকে আরও এক ধাপ এগোলাম।
কিন্তু এদিনই আবার দিল্লি পাতিয়ালা হাউস কোর্টের রায়ের কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্ভয়ার বাবা-মা। ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া চারজনের দ্রুত ফাঁসি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।কিন্তু এদিন ফাঁসির হুকুমনামা জারি করেনি আদালত। আগামী ৭ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি তিহার জেলের কর্তাদের উদ্দেশ্যে নোটিশ জারি করেছে। বলা হয়েছে, “বাকি তিনজন যদি প্রা্ণভিক্ষার আর্জি জানাতে চায়. তাহলে তা আগামী সাতদিনের মধ্যে করতে হবে।” আদালতের এই নির্দেশের পরই এজলাসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্ভয়ার বাবা-মা। তাঁদের আক্ষেপ, “যেখানেই যাই বন্দীদের অধিকারের কথা শুনি। কিন্তু আমাদের কথা কে ভাবে?”
বুধবার আদালতে এই মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারপতি অশোক ভূষণ, এএস বোপান্না ও জে বানুমথির বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুরু থেকেই ফাঁসির রায়ের বিরোধিতা করে অক্ষয় সিং ঠাকুরের আইনজীবী এপি সিংহ। তাঁর যুক্তি, “মৃত্যুর আগে নির্যাযিতাত কারোর নাম বলে যেতে পারেননি। অক্ষয়ের নাম মুখে পর্যন্ত আনেননি নির্ভয়া। তাই অক্ষয় সিংকে ফাঁসি দেওয়া উচিৎ নয়।” ফাঁসি আটকাতে তার আরও যুক্তি, “এভাবে অপরাধ কমানো যায় না। ফাঁসি দিলে অপরাধীকে মেরে ফেলা যায় ঠিকই। কিন্তু অপরাধ শেষ করা যায় না।” কিন্তু সেই সব যুক্তি ধোপে টেকেনি। এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে অক্ষয় সিং ঠাকুরের প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময়ের কথা বলা হয়েছে আইনে।
প্রসঙ্গত, এবছরের ১৬ ডিসেম্বর ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের। কিন্তু, তার আগেই সাজাপ্রাপ্ত পাঁচজনের মধ্যে একজন অক্ষয় সিং রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তাতে সে উল্লেখ করেছিল দিল্লির বায়ু ও জল দূষণের কথা। তার দাবি, দেশের রাজধানী দিল্লিতে জল ও বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ু এমনিতেই কমে যাচ্ছে। সেকথা সরকারও স্বীকার করেছে। তাই মানুষের জীবনের আয়ুই যখন কমে যাচ্ছে তখন তাকে ফাঁসির সাজা দিয়ে আর কী হবে? মঙ্গলবার সেই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু, শুনানি শুরুর আগেই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন প্রধান বিচারপতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.