ফাইল ফটো
সোমনাথ রায়, দ্রাস: কয়েকদিন আগেই রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে এনআইএ সংশোধনী বিল, ২০১৯। ফলে আরও ক্ষমতা বাড়তে চলেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার। যথারীতি বিলটির ‘অপব্যবহারের’ আশঙ্কায় সরব হয় বিরোধী দলগুলি। তবে যে বিষয়টি সবার নজর এড়িয়ে গিয়েছে, তা হল কাশ্মীর উপত্যকায় এনআইএ-র অতি সক্রিয়তা।
[আরও পড়ুন: অসমে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের সময়সীমা এক মাস বাড়াল সুপ্রিম কোর্ট]
নয়া আইনে এনআইএ-কে বিদেশে তদন্ত করার অধিকার প্রদানের কথা থাকলেও, কেন্দ্রের নজরে কিন্তু সেই সন্ত্রাস জর্জরিত জম্মু ও কাশ্মীরে। উপত্যকায় গত ২ বছরে, বেনজিরভাবে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির আয়ের উৎস জানতে একাধিক অভিযান চালিয়েছে এনআইএ। উল্লেখ্য, কাশ্মীরে প্রথম জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু হয় নয়ের দশক থেকেই। তবুও গত দু’বছরের মধ্যে এতটা সক্রিয়তা দেখায়নি কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সমস্ত অভিযান হচ্ছে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে। সূত্রের খবর, উপত্যকায় সন্ত্রাস নিয়ে তদন্তের রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কছে সরাসরি পাঠাচ্ছে সংস্থাটি। ফলে ‘লাল ফিতে’র জটে থমকে যাচ্ছে না এনআইএ-র অভিযান। এখনও পর্যন্ত প্রায় এক ডজন কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
২০১৭ সালে এক স্টিং অপারেশনে পাকিস্তানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা নইম খান। ওই বছর মে মাসেই আসিয়া আনদ্রাবি, নইম খান, হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জামাই আলতাফ আহমেদ শাহ-সহ একাধিক কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে এনআইএ। তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। আপাতত দিল্লির একটি জেলে রয়েছে তারা। তারপরই তাকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। এদিকে, তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে। উঠে আসে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে টাকা জোগানোর পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র। তারপর থেকে লাগাতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এনআইএ। তবে এতে দেখা দিয়েছে কিছু জটিলতা। সূত্রের খবর, পদে পদেই কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে এনআইএ। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে সেনা ও আধা সেনার মদতে অভিযান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
২০০৮ সালে উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মামলায় তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয় এনআইএ-কে। অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদীদের আয়ের উৎস সন্ধানের নাম প্রায় সমস্ত মামলায় তদন্ত করছে সংস্থাটি। এপর্যন্ত প্রায় ৩২টি এমন মামলা রয়েছে সংস্থাটির খাতায়। এদিকে, বিগত প্রায় তিন দশক থেকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াই করার পর এবার প্রায় ‘দর্শক’ কাশ্মীর পুলিশ। তাদের শুধুমাত্র যান চলাচল, গার্হস্থ্য হিংসা বা ‘পেটি ক্রাইম’ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে রাজ্যের আইনরক্ষকদের মধ্যে। বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর উপত্যকায় ‘আয়রন হ্যান্ড’ পলিসি নিয়েই চলবে মোদি সরকার। সেক্ষেত্রে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ও সেনার উপরই ভরসা রাখবেন মোদি-শাহ। তবে এহেন ‘বুলি নয় গুলি’ নীতিতে ভবিষ্যতে কেন্দ্র ও রাজ্যের আইনরক্ষা বাহিনীর মধ্যেই সংঘাত বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.