সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “এক খটমলনে সারা ট্রেনকো হিলা দিয়া”। আপার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর এইরকম অভিযোগে জামালপুর স্টেশন মাস্টার ভিরমি খেয়ে রীতিমতো চেয়ার থেকে পড়ে জখম হয়েছিলেন একদিন। আর তারপরই সেই খবর পূর্ব রেলের সদর দপ্তর হয়ে সোজা পৌঁছে যায় দিল্লির রেল বোর্ডের সদর দপ্তরে।
ট্রেনের যাত্রাপথে এই পোকার দৌরাত্ম্যের পাল্লায় পড়েননি এমন যাত্রীর সংখ্যা সত্যিই খুব কম। তাই এধরনের বিড়ম্বনা স্থায়ীভাবে রুখতে রেল কর্তৃপক্ষ এবার ট্রেনের কামরার ভিতরে লাগাতে শুরু করল ‘স্লো রিলিজ ইনসেক্টিসাইডাল পেন্ট (এসআরআইপি)। এই রং শুধু চাকচিক্যময় নয়, পরিবেশের আমূল বদলও ঘটাবে। কামরার ভিতরে থাকা ঠান্ডা রক্তের পোকাদের এতে মৃত্যু অনিবার্য। এমনকি এই রং করলে ইঁদুর থেকে গিরগিটি কেউই কোচের ধারে কাছেও আসতে পারবে না এবং এই রং পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী বলে দাবি করেছেন রেলের ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন বিভাগ। তবে তাঁরা আরো জানিয়েছেন যে, পোকামাকড়, ইঁদুর তাড়ালেও এই রঙের গন্ধ যাত্রীদের শ্বাসকষ্ট ঘটাবে না। প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষতি না করার মতো রং এটি। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে এই রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে এই রঙের প্রলেপ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ছ’টি এসি কোচ পরীক্ষামূলকভাবে চালানোও শুরু হয়ে গেছে। হাওড়া থেকে চলাচলকারী করমণ্ডল ও চেন্নাই মেলে কামরাগুলিকে দেওয়া হয়েছে বলে রেল কতৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পোকামাকড়ের দৌরাত্ম্য ট্রেন চলাচলের শুরুর দিন থেকেই রয়েছে। তাই প্রথম দিন থেকেই পোকা নিধনের জন্য রেলের বিশেষ বিভাগও রয়েছে। ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন বিভাগের আওতায় ‘পেস্ট কন্ট্রোল’ বিভাগও রয়েছে। যারা রেল বোর্ডের আইন মেনে বর্তমানে বিশেষভাবে পোকা নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রকের ছাড়পত্র সম্বলিত ও সিআইবি এবং আরসি ফরিদাবাদের স্বীকৃত কেমিক্যাল ব্যবহার করছে তাঁরা এই নিধনের ক্ষেত্রে। এসি কোচ, প্যান্ট্রি কার, নন এসি সংরক্ষিত কোচে প্রথমে পনেরোদিন, তারপর তিন মাস এবং তারপর প্রতি মাসে একবার ও অসংরক্ষিত কামরায় দু’মাসে একবার করে এই পোকা নিধনকারী কেমিক্যাল দেওয়া হবে। কেমিক্যালের সঙ্গে জল মিশিয়ে কোচের পর্দা থেকে সিট, প্যানেল জোড় প্রভৃতি জায়গায় স্প্রে করছেন পেস্ট কন্ট্রোলের কর্মীরা। ইঁদুরের জন্য ট্রাবল গাম বা গ্লুবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। চার-পাঁচ ইঞ্চির এই বোর্ড পার্টিশন ওয়াল, বার্থ ও সিটের নিচে লাগানো হচ্ছে। যারফলে ওখানে ইঁদুর গেলেই আঠায় সেঁটে যাবে।
তবে অনেক সময় পোকা মারতে যে কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় তাতে যাত্রী থেকে কর্মী সকলেরই ভীষণ সমস্যা হয়, কটু গন্ধ বা ঝাঁঝালো গ্যাস তো নাকে লাগেই, পাশাপাশি ফুসফুস ও শ্বাসনালির পক্ষেও এটা ক্ষতিকারক। এছাড়া এই পেস্ট কন্ট্রোল বিভাগে প্রতিটি জোনে কম করে জনা দশেক করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও রয়েছেন। এঁদের বেতন হিসাবে রেলকে গুনতে হয় মোটা টাকা। তাই একদিকে অর্থ সাশ্রয়, অন্যদিকে স্বাস্থের ক্ষতি রুখতে পাকাপাকি বন্দোবস্ত করতে চায় রেল। সেই জন্যই রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, কোচ নির্মাণ বা বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণের সময় এই এসআরআইপি রং লাগিয়ে দিলে সমস্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.