প্রধানমন্ত্রীর হাতে মা কালীর ছবি তুলে দিচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়
নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ‘লক্ষ্য সঠিকভাবেই নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। বাংলায় ‘পরিবর্তন’ প্রয়োজন। দেশের ভালর জন্য বাংলা জিততেই হবে।’ একথা জানিয়েই বাংলায় ক্ষমতা দখলের জন্য দলীয় সাংসদদের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের শুরু থেকে প্রত্যেক দিনই বাংলার বিজেপি (BJP) সাংসদদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিদিন রাজ্যের দুই থেকে তিনজন দলীয় সাংসদকে ডেকে সংসদের অন্দরে নিজের দপ্তরে কাজের ফাঁকেই বৈঠক সেরে নিচ্ছেন তিনি। প্রত্যেকের সঙ্গেই কমপক্ষে কুড়ি মিনিট থেকে আধঘণ্টা কথা বলছেন। আলোচনা করছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার দলীয় সাংসদরা যা যা বলছেন, তার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিজের হাতেই নোট করে রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের প্রত্যেক সাংসদদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করছেন, নোট নিচ্ছেন, এমন কথা রাজনীতির ইতিহাসে খুবই কম শোনা গিয়েছে। বাংলা দখলের জন্য বিজেপি কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে, মোদির এহেন আচরণই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। প্রায় এক বছর দেরি রয়েছে তার জন্য। কিন্তু, সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে বলে দলীয় সাংসদদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব মোদি যে নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন, সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর করা প্রশ্নতেই তা মালুম পড়েছে। দলের কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী প্রায় সব সাংসদের কাছেই তা জানতে চেয়েছেন।
‘‘বাংলায় আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি কী রয়েছে সেগুলি আগে বলুন।” একথা বলেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করেছিলেন বলে জানান বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রাজ্যের অবস্থা কী রকম, মানুষের মনে বর্তমান সরকার সম্পর্কে কী কী ক্ষোভের জায়গা রয়েছে। বিজেপির কাছ থেকে মানুষের কী প্রত্যাশা, জেতার জন্য কীভাবে মানুষের কাছে গেলে ভাল হয়, এই সমস্ত প্রশ্নও মোদি দলের প্রায় প্রত্যেক সাংসদের কাছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের এলাকা নিয়েও বিশদ জানতে চেয়েছেন। প্রত্যেক সাংসদের কাছেই বাংলা দখলের জন্য তাঁদের মাথায় কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেকথাও জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সাংসদদের কী করতে হবে সেই বিষয়েও অল্পবিস্তর পরামর্শ দিয়েছেন।
এই প্রশ্নমালা থেকে বাদ যাননি হুগলির সাংসদ তথা মহিলা বিজেপির রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবারই লকেটের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বাকি সব প্রশ্নের সঙ্গেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কতটা অবগত সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। জেতার জন্য কীভাবে মানুষের কাছে গেলে ভাল হয় সে কথা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে পরে কিছু মাথায় এলে সেটাও জানিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন বলেই জানিয়েছেন লকেট। এপ্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে সংগঠনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা কী কী আন্দোলন করছি, কীভাবে এগোচ্ছি, আরও কীভাবে এগোনো যায়, এই সব কিছুই জানতে চেয়েছিলেন তিনি। দলীয় সংগঠন নিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্নও করেছেন।’
বাংলাকে যে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই পাখির চোখ করেছে, সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাশ হাতে নিয়েছিলেন দলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এখন তিনি সভাপতি পদে নেই। কিন্তু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই যে এবারও বাংলার দায়িত্ব থাকবে সেকথা বিজেপির অন্দরেই শোনা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন মোদিও। প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে এলাকাভিত্তিক মতামত গ্রহণ করা, জেতার রাস্তা কী তা জানতে চাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, বাংলা দখলে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রণকৌশল চূড়ান্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শাহ নিজে বাংলা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপাবেন। কিছুদিন পর থেকেই তিনি প্রতিমাসে কমপক্ষে তিনদিন বাংলায় থাকবেন। চলতি বছরের অক্টোবর নাগাদ তা বেড়ে মাসে আটদিন পর্যন্ত হতে পারে। একসময় উত্তরপ্রদেশ দখলের জন্য যে কায়দায় মোদি-শাহ জুটি ঝাঁপিয়েছিলেন, সেই একইভাবে বাংলা দখলের লক্ষ্যেও তাঁরা ঝাঁপাবেন বলেই শোনা যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.