সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৪০০-র বেশি আসন পাবে, বলেছিলেন আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। বিরোধীদের কটাক্ষ উপেক্ষা করে প্রায় প্রতিটি জনসভা থেকে তিনি স্লোগান তোলেন, ‘‘অব কি বার ৪০০ পার।’’। আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছিল সাত দফা নির্বাচনের মাস চারেক আগে রামমন্দির উদ্বোধনের মতো মাস্টার স্ট্রোক। অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাও বিজেপিকে (BJP) প্রায় চারশো আসন পাইয়ে দিয়েছিল। যদিও গণদেবতার রায় অন্য কথা বলল। ৪০০ তো বহুদূর, কোনও রকমে ৩০০-র কাছাকাছি আসন পেয়ে বৈতরণী পার করল এনডিএ (NDA)। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি। থমকাতে হল ২৪০ আসনে। প্রশ্ন হল, কোন মন্ত্রে বদলাল দেশের রায়?
সেই উত্তর দেওয়ার আগে পড়ে নেওয়া দরকার বিজেপি, এনডিএ জোট তথা নরেন্দ্র মোদির রকেট উত্থান। ২০১৪ সালে মোদির সারথী ছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। দেশ প্রথমবার ‘ব্র্যান্ড’ রাজনীতির সাক্ষী হয়। আসমুদ্রহিমাচলে স্লোগান ওঠে- ‘অব কি বার মোদি সরকার’। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির প্রচার এবং ‘ব্র্যান্ড মোদি’র কৌশল সফল হয়। ৩৩৬ আসন জিতে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট। বিজেপি একাই পায় ২৮২ আসন। পরবর্তী পাঁচ বছরে গেরুয়া মাটি শক্ত করে ২০১৯ সালে ৩৫৩ আসন পায় এনডিএ জোট। দ্বিতীয়বার গদিতে বসেন মোদি। বিজেপি একাই ম্যাজিক ফিগার (২৭২) ডিঙিয়ে পায় ৩০৩ আসন।
২০২৪ লোকসভার নির্বাচনের আগে এই আত্মবিশ্বাসই পর্যায়ক্রমে এভারেস্ট ছোঁয়। নেপথ্যে পাকিস্তান তাস। ভোটের ঠিক আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলে নেওয়ার হুমকি দেন একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এছাড়াও ভূস্বর্গ থেকে ৩৭০ ধারা রদ, তিন তালাক আইন, সিএএ লাগু এবং অবশ্যই অযোধ্যার রামলালার মন্দিরে ভর করে হেলায় লোকসভা জয়ের কথা ভেবেছিল গেরুয়া শিবির। সেখানে থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘অব কি বার ৪০০ পার’ স্লোগানের জন্ম। ৪০০ পার হলে কী হবে, তাও বুঝিয়ে দিয়েছিল একাধিক গেরুয়া নেতা। মোদি ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্য ঘোষণা করার পরেই বিজেপির একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেন, সংবিধানে বদল করা হবে বলেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। অন্তিম লক্ষ্য হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা। এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা প্রচারে নেমে বলেছিলেন, এ বারের ভোট সংবিধান বাঁচানোর ভোট। বিরোধীদের এই প্রচারেই কি কাজ হল?
বিজেপির ৪০০ পারের স্লোগান নিয়ে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর ঠাট্টা করেছিলেন, বিজেপির ৩০০ পার অসম্ভব। ৪০০ পার আসলে জোক। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করেন, ‘‘ইস বার পগার পার (এই বার পগার পার)।’’ তিনি আর বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে মানুষ মোদি সরকারকে বিদায় দেবে।’’ বাস্তবে বিদায় না করলেও নিশ্চিত আত্মবিশ্বাসে চির ধরল বিজেপির। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রথমত ২০১৪ এবং ২০১৯ এর মতো করে ‘মোদি ম্যাজিক’ কাজ করেনি ২০২৪ সালে। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করে গোড়া হিন্দুদের মন জিতলেও মেরুকরণের রাজনীতি সমানভাবে পছন্দ হয়নি দেশের সব প্রান্তের সব শ্রেণির মানুষের।
যদিও নির্বাচনী প্রচারে সব থেকে বেশি করে এই মেরুকরণেই জোর দিয়েছিল বিজেপি। যার বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দলগুলি। বাংলায় এসেও একাধিক সভায় মোদি-শাহ দাবি করেছিলেন, মুসলমানদের সমস্ত সংরক্ষণ পাইয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককের রাজনীতি করছেন বলেও কটাক্ষ করেন বিজেপির দুই শীর্ষনেতা। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সেই বাংলার আকাশেও উড়ছে সবুজ আবির। ২৮ আসনে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস! কোনওক্রমে ১২ আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি!
বাংলার পাশাপাশি দেশের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ফলাফলেও। সেখানে এক্সিট পোলকে গো-হারা হারিয়েছে জনতার রায়। ইন্ডিয়া জোট জিতেছে ৪২ আসনে। ৩৭ আসনে জিতেছে এনডিএ। রায়বরেলিতে মা সোনিয়ার থেকে বেশি ব্যাবধানে জিতেছেন রাহুল গান্ধী। এভাবে বহু রাজ্যে চমকে দিয়েছে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোট। ফলস্বরূপ গোটা দেশে আগুন ফাঁকির মতো উত্থানে তারা পৌঁছে গিয়েছে ২৩০ আসনে। অন্য দিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া শিবিরের ৪০০ পারের স্লোগান। কোনওরকম ২৯৫ আসন পেয়ে বৈতরণী পার করল এনডিএ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.