জানেন কি, 'কুমিরবাহিনী' কাদের বলা হয়?
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ ৪৫-তম নৌবাহিনী দিবস৷ এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এদিন দেশজুড়ে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ভারতীয় নৌসেনা ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক৷ ভারতীয় নৌসেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর৷ পারিকর টুইট করে নৌবাহিনীর সমস্ত অফিসার, নাবিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতেও নৌবাহিনীর সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে৷
Navy Day greetings to all navy personnel & their families. We cherish the vital role of the navy & salute the bravery of our navy personnel.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 4, 2016
এই মুহূর্তে ভারতীয় নৌবাহিনী বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম নৌসেনা বাহিনী৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব দেশের সামুদ্রিক সীমা সুরক্ষিত রাখা। এছাড়াও যৌথ মহড়া, বন্দর পরিদর্শন এবং বিপর্যয়ের সময় ত্রাণকাজের মতো জনকল্যাণকর কাজে নৌবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেয় তথ্য বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী তিনটি যুদ্ধবিমান বাহক ও তিনটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজের অধিকারী হবে। এছাড়া ৫৭টি যুদ্ধবিমান-সহ প্রায় ২৫০টি বিমান ভারতীয় নৌবাহিনী ব্যবহার করে। ৪৫-তম নৌসেনা দিবস উপলক্ষ্যে এই বিশেষ প্রতিবেদনে রইল জাতীয় নৌবাহিনী নিয়ে বেশ কিছু তথ্য, যেগুলি পড়লে আপনি অবাক হবেন৷
১. ১৬১২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নৌশাখা ‘রয়াল ইন্ডিয়ান নেভি’ গঠন করে৷ স্বাধীনতার পর, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সেই বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় ভারতীয় নৌবাহিনী৷
২. উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভারতীয় নৌবাহিনী যেদিন গঠিত হয়, সেই দিনটিকে কিন্তু নৌবাহিনী দিবস হিসাবে পালন করা হয় না৷ ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে পাক নৌসেনার সদর দফতরে হামলা চালায় ভারতীয় নৌসেনা বাহিনী৷ ১০০ শতাংশ সাফল্য পায় ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’৷ ওই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই নৌবাহিনী দিবস পালন করার প্রথা শুরু হয়৷
৩. একাত্তরের যুদ্ধে, ভারতীয় নৌবাহিনী বেছে বেছে পাকিস্তানের তেলের খনি, ট্যাঙ্কারগুলিকে ধ্বংস করে৷ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা রণতরী থেকে মিসাইল ছুঁড়ে, অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে ওই যুদ্ধে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করেছিল ভারত৷ সে সময় ওরকম ‘অল-আউট অ্যাটাক’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা মুখের কথা ছিল না৷ কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন নৌসেনা বাহিনীর সদস্যরা৷
৪. ভারতীয় নৌসেনায় বর্তমানে ৫৮ হাজার জন কর্মরত সদস্য রয়েছেন৷ সামরিক হাতিয়ারের দিকে নজর দিলে, ভারতের কাছে রয়েছে দু’টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ দৈত্যাকৃতির সামরিক নৌবহর, এক উভচর পরিবহণ বন্দর, ১৯টি ল্যান্ডিং শিপ ট্যাঙ্ক, ১০টি ডেস্ট্রয়ার, ১৫টি রণতরী, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন, ১৪টি সাবমেরিন, ২৫টি করভেটস, ৪৭টি পেট্রল ভেসেল, ৪টি দ্রুতগামী ট্যাঙ্কার, একটি মিসাইল সাবমেরিন-সহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম৷
৫. বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিরাট হল ভারতের প্রথম রণতরী৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বিতীয় রণতরীর নাম আইএনএস বিক্রমাদিত্য৷ আইএনএস ভিক্রান্ত এ দেশে তৈরি প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার৷
#NavyWeek2016 Pride of the nation INSVikramaditya &latest GuidedMissileDestroyer INSChennai off Mumbai harbour dis morning @SpokespersonMoD pic.twitter.com/xXLuka79Iq
— SpokespersonNavy (@indiannavy) December 2, 2016
৬. ভারতীয় রণতরীগুলিকে নেতৃত্ব দেয় ৬ হাজার টনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত৷ রাষ্ট্রসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ ব্যতীত একমাত্র ভারতের কাছেই এরকম একটি ডুবোজাহাজ রয়েছে৷
৭. ভারতের মেরিন কমান্ডো বাহিনীর নাম ‘মার্কোস’৷ যার প্রত্যেক সদস্যকে বলা হয় সমুদ্রের সিংহ৷ অনেকে আবার মার্কোস কমান্ডোদের ‘কুমির’ বলেও ডাকেন৷ কারণ, জলের তলায় বা বাইরে, এই কমান্ডোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শত্রুদের পক্ষে বেঁচে ফেরা সম্ভব নয়৷ জঙ্গিরা এই বাহিনীকে ডাকে ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’ বলে৷ কারণ, স্পর্শকাতর অঞ্চলে এই কমান্ডোরা ছদ্মবেশে থাকতে নকল লম্বা দাড়ি ব্যবহার করতেন৷ ২০০৮-এর অভিশপ্ত মুম্বই হামলায় পণবন্দীদের উদ্ধার অভিযানে এই ‘কুমিরবাহিনী’ চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল৷ মজার বিষয়, এই কমান্ডোরা কে, কোথায় থাকেন, সেটা প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতেগোনা কয়েকজন আধিকারিক ছাড়া অন্য কেউ জানেন না৷ এতটাই সযত্নে তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷
৮. গোটা বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের নৌবাহিনীর ‘ন্যাভাল এয়েরোব্যাটিক টিম’ রয়েছে৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘সাগর পবন’ তাদের মধ্যে একটি৷
৯. ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অভিযান সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন৷ ২০০৮-এর ৯ এপ্রিল ভারতীয় নৌবাহিনীর দশ সদস্যের একটি দল উত্তর মেরু অভিযানে সফল পেতেই তৈরি হয় নয়া ইতিহাস৷ বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরাই উত্তর, দক্ষিণ ও মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ‘থ্রি পোলস অ্যাডভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ’-এ উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন৷ ভারতীয় নৌসেনার মুকুটে রয়েছে সেই পালকও৷
#NavyWeek2016 Latest Guided Missile Destroyer of Indian Navy INS Chennai anchored to guard Mumbai harbour on Navy Day @SpokespersonMoD pic.twitter.com/4BFCxuTZJC
— SpokespersonNavy (@indiannavy) December 4, 2016
১০. ভারতই একমাত্র দেশ, যেখান থেকে একজন ডুবোজাহাজে কর্মরত সদস্য মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছেন৷ ২০০৪ সালের ১৮ মে সার্জেন লিউটেন্যান্ট ভাইকিং ভানু, একজন নেভি ডাক্তার, মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট রাকেশ কুমার ও বিকাশ কুমারকে নিয়ে তৈরি ভারতীয় নৌসেনার একটি টিম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে৷
সবশেষে জেনে রাখা ভাল, প্রায় ২০০০ মেরিন কমান্ডো-সহ প্রায় ৫৮,৩৫০ সক্রিয় সেনাকর্মী সম্বলিত এই নৌবাহিনীতে বর্তমানে ১৫৫টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যুদ্ধবিমান বাহক আইএনএস বিরাট, আইএনএস বিক্রমাদিত্য৷
#NavyDay All ranks of Indian Navy join me in extending our greetings to our great countrymen on the occasion of Navy Day-Admiral S Lanba CNS pic.twitter.com/rXl3V5H5Nr
— SpokespersonNavy (@indiannavy) December 4, 2016
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.