Advertisement
Advertisement

ভোট টানতে হাতিয়ার জাতীয়তাবাদই, ঘর গোছাচ্ছে শাসক-বিরোধী শিবির

জাতীয়তাবাদের হাওয়াতে গা ভাসিয়েছে গোটা দেশ।

'Nationalism' issue key for LS polls
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:March 5, 2019 4:47 pm
  • Updated:March 5, 2019 4:47 pm  

নন্দিতা রায়: প্রথমে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার ঘটনায় ৪৯ জন ভারতীয় জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনা এবং তাঁকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েকদিনে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চাপানউতোর, এবং ফলস্বরূপ দেশে বলা ভাল সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। এই সবকিছুর মধ্যেই ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় গুটি গুটি পায়ে ঢুকে পড়ে বতর্মানে বেশ জমিয়েই জায়গা করে নিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু তথা জাতীয়বোধ। যা আজ থেকে দিন পঞ্চাশেকের মধ্যে সম্ভাব্য লোকসভা নির্বাচনেও অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে বলেই ইতিমধ্যেই সংকেত মিলতে শুরু করেছে। শাসক শিবির বা বিরোধী শিবির দুই পক্ষই ভালভাবেই বুঝতে পারছে যে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য তাদের জাতীয় নিরাপত্তা তথা জাতীয়তাবোধের ইস্যুটিকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই দুই শিবিরই এই ইস্যুতে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।

জাতীয়তাবোধের বিষয়টি শাসকপক্ষ বিজেপির বরাবরেই প্রিয় বিষয়। তারা সবসময় দেশে জাতীয়তাবোধের হাওয়া তুলতে পছন্দ করে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। জাতীয়তাবোধের পালে হাওয়া দিয়ে নিজেদের নৌকা দিল্লির মসনদ পর্যন্ত পৌঁছানর জন্য বিজেপি যে জান লড়িয়ে দেবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এখানেই তাদেরকে আটকাতে চাইছে বিরোধীরা। বিজেপি জাতীয়তাবোধ নিয়ে রাজনীতি করছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করে ফেলেছে বিরোধীরা। কিন্তু শুধু যে আর বিজেপি জাতীয় নিরাপত্তা, শহিদদের মত সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে বলে গলা ফাটিয়ে অভিযোগ করলে তাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে চিঁড়ে ভিজবে না সেটাও ভালভাবেই টের পেয়েছে বিরোধী শিবির। তাই জাতীয়তাবাদের হাওয়াতে গা ভাসিয়েছেন তারাও। তাই সদ্য দু-দিন আগেই বিরোধী জোটের বৈঠকের শুরুতেই শহিদদের উদ্দেশ্য শোকপালন থেকে শুরু করে দেশের এই সময়ে তারা যে কৃষি সমস্যা, বেকার সমস্যা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে এযাবৎ কাল ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন তা নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। শুধুই কি মানবিকতা ও সংবেদনশীলতার কারণেই বিরোধীরা এই কাজ করেছে এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে আসবে। এর উত্তর শুধুমাত্র হ্যাঁ বা না তে দিলে তা বড় ক্লিশে হয়ে যাবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, এই বাজারে যে জাতীয়তাবোধ ছাড়া যে মানুষ আর কিছুই গ্রহণ করবে না তা দেশের তাবড় তাবড় বিরোধী নেতা-নেত্রীদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাই তারাও আর অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করতে চাননি। উলটে এই জাতীয়তাবোধের ইস্যুর অন্দরে ঢুকে পড়তে তারা দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী সব দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকুক।

Advertisement

প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস তো কয়েকদিন আগেই জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করে ফেলেছে। দেশে জাতীয়তাবোধের যে হাওয়া উঠেছে তা যাতে শুধুমাত্র বিজেপির পালেই না লেগে তাদের পালেও লাগুক সেই চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক টুইট থেকে শুরু করে জনসভায় বায়ুসেনার প্রশংসার মত ছোট ছোট বিষয়গুলি সেই ইঙ্গিতই বহন করে। শুধু কংগ্রেসই নয়, অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ফেসবুক, টুইটারের মত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বায়ুসেনার প্রশংসার ঝড়, কেন্দ্র সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা চলছে লাগাতার। বিজেপি যাতে কোনওভাবেই এই চলতি জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে কাজে লাগাতে না পারে তার জন্য বিরোধীরা সদা সচেষ্ট হয়ে রয়েছে। উলটোদিকে শাসকপক্ষ বিজেপি আবার এই বিষয়টিতেই সবথেকে বেশি সতর্ক। যাতে জাতীয়তাবোধের ইস্যুর ভাগ যাতে তারা ছাড়া আর কেউ না পায় সেটাই আপাতত তাদের প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য তারা যে জান অবধি বাজি রাখতে রাজি একথা বললে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না।

একদিকে যেমন, জাতীয়তাবাদের হাওয়া কাড়তে কংগ্রেস তথা বিরোধীদের সমালোচনায় বিদ্ধ করার মত পদক্ষেপ শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে সর্বসমক্ষেই নেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে আবার ভারতীয় বায়ুসেনা যেদিন পাকিস্তানে স্ট্রাইক করেছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে ছিলেন এই সমস্ত কথা সুচারুভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির অন্য নেতারা তো রয়েছেনই, খোদ প্রধানমন্ত্রীও নিজের প্রায় সমস্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চেই জাতীয়তাবাদের হাওয়া উসকে দিয়েছেন। তা সে রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে জাতীয় যুদ্ধ স্মারককে জাতীয় উদ্দেশ্য সমর্পণের অনুষ্ঠান হোক বা রাজস্থানের চুরুতে জনসভা হোক বা দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স। সব জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রী দেশের সুরক্ষা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন। এমনকি পাকিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয় বায়ুসেনা আধিকারিক অভিনন্দন বর্তমানের ছাড়া পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এটি শুধুমাত্র ট্রেলার, অ্যাকশন এখনও বাকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তাতে একথা স্পষ্ট যে জাতীয়তাবাদের ইস্যুটিকে তারা এখন তাজাই রাখতে চাইছেন। দেশে জাতীয়তাবাদের যে ঢেউ উঠেছে তা যাতে সহজে থেমে না যায় তার জন্য শাসক শিবির আগামিদিনে নতুন কিছু টোটকা দেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখন সেই টোটকা কি হয় সেটাই দেখার অপেক্ষা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement