সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্ডিয়া জোট যেন রামগরুড়ের ছানা! রাজনীতির প্রোফেসর হিজিবিজবিজদের হাতে নানা জন্তুর অঙ্গ দিয়ে গড়া। সদ্য এই এই রামধনু জোটের মাজা ভেঙে তথা বিরোধী ‘ষষ্ঠীচরণ’দের মাথায় মুদগরের বাড়ি কষিয়ে আবারও এনডিএ শিবিরে ফিরে গিয়েছেন নীতীশ কুমার। সোমবার সেই জোটের প্রধান শক্তি কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লোকসভায় জবাবি ভাষণে সংসদে বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসের অন্তর্কলহেই যেন ‘ইন্ধন’ জুগিয়ে দিলেন কৌশলী মোদি!
এদিন সংসদে জবাবি ভাষণে তিনি বলেন, “অধীরবাবুকে দেখে কষ্ট হয়। তাঁকে পরিবারতন্ত্রের পুজো করতে হচ্ছে।” বোঝাই যাচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় রয়েছে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র। লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে আসনরফা তথা তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘জমি ছাড়া’ নিয়ে বাংলার হাত শিবিরের নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের টানাপোড়েনকেই হাতিয়ার করেছেন বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভালোই জানেন. শিবরাত্রির সলতের মতো মুর্শিবাদের দাপুটে কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ অধীর চৌধুরীই বঙ্গে কংগ্রেসের একমাত্র গড়। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ‘লড়াই’য়ে বহরমপুরের সাংসদই ভরসা নীচুতলার কংগ্রেস কর্মীদের। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট তথা আসনরফা ইস্যুতে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে অধীরের সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ নয়। গত সপ্তাহে বাংলার বুকে রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা’ করলেও তা কম কর্মীদের কতটা চাঙ্গা করতে পেরেছে সেই খতিয়ান মেলেনি। তৃণমূল স্তরে দলের সংগঠন বিরাট শক্তিলাভ করেছে এমনটা মনে করারও কোনও কারণ দেখা যায়নি। উলটে রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙাকে কেন্দ্র করে দলীয় মতানৈক্য সামনে এসেছে। কাচ ভাঙা প্রসঙ্গে অধীর যখন তৃণমুলকে ইঙ্গিত করছেন, তখন দলই কার্যত বলে দেয় যে গোটাটাই মিথ্যাচার। ফলে হাইকমান্ড কতটা পাশে থাকবে তা নিয়ে রাজ্যে কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। সেই সন্দেহই যেন আরও উসকে দিলেন মোদি। সংসদে তিনি ইঙ্গিচে বুঝিয়ে দিলেন, সোনিয়া-রাহুলদের অঙ্গুলিহেলনে মন সায় না দিলেও বাধ্য হয়ে অনেক কিছু মেনে নিতে হচ্ছে অধীরকে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরই সাংহাদিক বৈঠক করেন অধীর। মোদিক বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “কুয়োর ব্যাঙ ছিলেন, তাই রয়ে গিয়েছেন। ২০১৪ সালে জুমলাবাজি করে ক্ষমতায় এসেছেন। ২০১৯ সালে বালাকোট। আর চব্বিশে রামকে হাতিয়ার করে নির্বাচনে নামছেন তিনি।”
বলে রাখা ভালো, ইন্ডিয়া জোটের আর্কিটেক্ট নীতিশ কুমার, কো-আর্কিটেক্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগে এমনটাই বলতে শোনা যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বারবার ‘একলা চলো’র কথা বললেও জোটধর্মে বিশ্বাসী কংগ্রেসের সুর মমতায় যথেষ্ট নরম। অধীর যখন বলছেন, ন্যায়যাত্রায় পদে পদে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল, তখনই রাহুল-খাড়গেরা বলছেন, মমতাকে পাশে চাই। আসনরফা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ঘোলা জলে সংসদে অধীরের প্রসঙ্গ টেনে মোদি যেন বলতে চাইছেন, কংগ্রেস নিজেদের দলই চালাতে পারছে না। দিল্লির সিদ্ধান্তে অধীরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এবং বিরোধী দলনেতা হলেও তাঁক কথায় হাইকমান্ড তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। সবমিলিয়ে বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের অন্তর্কলহে ‘ইন্ধন’ জোগালেন কৌশলী মোদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.